পাতা:অমৃত-দ্বীপ - হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৯৪০).pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমৃত দ্বীপ
১৫

মস্তকান্দোলনে দিকে দিকে ঠিকরে পড়ছে বাঁধন-হার। নিকষ কালো মেঘের জটা এবং ঘন ঘন পদাঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে উথলে উঠছে তরঙ্গাকুল মহাসমুদ্র!

 ফিরে দাঁড়িয়ে অভিভুত স্বরে জয়ন্ত বল্‌লে, “টাইফুন্?”

 কুমার খালি-চোখেই সেদিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা আন্দাজ ক’রে নিয়ে বলে, “হ্যাঁ, আমরা যাকে বলি ঘূর্ণাবর্ত্ত।”

 মাণিক বল্‌লে, “কিন্তু আমাদের এখানে তো একটুও বাতাস নেই, অসহ্য উত্তাপে গা যেন পুড়ে যাচ্ছে!”

 কুমার বল্‌লে, “ও-সব টাইফুনের পূর্ব্ব-লক্ষণ। এ অঞ্চলে টাইফুন্‌ জাগবার সম্ভাবনা ঐ লক্ষণ থেকেই জানা যায়।”,

 জয়ন্ত বল্‌লে, “কুমারবাবু, সমুদ্র যাত্রা আমার এই প্রথম, এর আগে টাইফুন্ কখনো দেখি নি। কিন্তু শুনেছি চীনা-সমুদ্রে টাইফুনের পাল্লায় প’ড়ে ফি বৎসরেই অনেক জাহাজ অতলে তলিয়ে যায়।”

 —“সেইজন্যেই তো ওকে আমরা বোম্বেটেদেরও চেয়ে ভয়ানক ব’লে মনে করছি! বোম্বেটেদের সঙ্গে লড়া যায়, কিন্তু টাইফুনের সঙ্গে যুদ্ধ করা অসম্ভব। এখন আমাদের একমাত্র আশা ঐ দ্বীপ। যদি টাইফুনের আগে ওখানে গিয়ে পৌঁছতে পারি! হয়তো পারবও, কারণ আমরা দ্বীপের খুব কাছে এসে পড়েছি। এই দেখুন, আমাদের জাহাজের গতি আরো বেড়ে উঠেছে!”

 এতক্ষণ সুন্দরবাবু ছিলেন ভয়ে হতভম্বের মত। এইবারে মুখ খুলে তিনি ব’লে উঠলেন, “হুম্! দুর্গে দুর্গতিনাশিনী!”