পাতা:অমৃত-দ্বীপ - হেমেন্দ্রকুমার রায় (১৯৪০).pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অমৃত-দ্বীপ
১৯

বাঘা বললে, “ঘেউ, ঘেউ, ঘেউ!”

 বিমল বল্‌লে, “তবে কি বোম্বেটেগুলো ঝড়ের খপ্পরেই পড়ল? দাঁড়াও, দেখে আসি”—ব’লেই সে তাড়াতাড়ি পাহাড়ের উপরে উঠতে লাগল।

 রামহরি উদ্বিগ্ন স্বরে বলে “ওপরে উঠ না খোকাবাবু, ওপরে উঠ না! বেশী ঝড় এলে উড়ে যাবে!”

 কিন্তু বিমল মানা মানলে না। পাহাড়ের প্রায় মাঝ বরাবর উঠেই দাঁড়িয়ে প’ড়ে একদিকে তাকিয়ে সে চমৎকৃত স্বরে বল্‌লে, “আশ্চর্যা, আশ্চর্য্য! কুমার, কুমার, শীগ্‌গির দেখে যাও।”

 বিপুল কৌতূহলে সবাই দ্রুতপদে উপরে উঠতে লাগল—একমাত্র, সুন্দরবাবু ছাড়া। তাঁর বিপুল ভুঁড়ি উর্দ্ধমার্গের উপযোগী নয়।

 বাস্তবিকই সে এক আশ্চর্য্য দৃশ্য! যে বিষম টাইফুনের ভয়ে তারা সবাই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে, সে-ভয়ঙ্কর দ্বীপের দিকে না এসে যেন পাশ কাটিয়েই প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে চলেছে অন্য দিকে হুহু ক’রে। দ্বীপের দিকে এসেছে খানিকটা উদ্দাম হাওয়ার ঝট্‌কা মাত্র, কিন্তু টাইফুন্ নিজে যেখান দিয়ে যাচ্ছে সেখানকার শূন্যে দুলছে নিরন্ধ, অন্ধকার—নীচে কেবল অস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে রুদ্র সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গদলের হিন্দোলা! আর ভেসে ভেসে আসছে প্রমত্ত ঘূর্ণাবর্ত্তের বিকট চীৎকার, গম্ভীর জল-কল্লোল, বহু মানব-কণ্ঠের আর্ত্তনাদ!

 কুমার অভিভূত স্বরে বললে, “এমন বিচিত্র ঝড় আর কখনো দেখি নি। কিন্তু বোম্বেটেদের জাহাজখানা কোথায় গেল?”

 বিমল বল্‌লে, “ওখানকার অন্ধকার ভেদ ক’রে কিছুই দেখবার