দৃষ্টি সেখানে যাকে খুঁজছিল তাকে দেখতে পেলে না। তবু একটা ভয়াবহ অসম্ভবের সম্ভাবনা হ্রদের নীলিমাকে ক'রে রেখেছিল রহস্যময়।
চাঁদের বাতি নিবিয়ে দিয়ে এল অরুণ প্রভাত। মহাসাগরকে আলোময় ক'রে সে পূর্বাকাশে এঁকে দিলে তরুণ সূর্য্যের রক্ত-তিলক। জাহাজ বেগে ছুটেছে অমৃত-দ্বীপের উদ্দেশে।
ডেকের উপরে ‘মর্নিং ওয়াক্’ করতে করতে সুন্দরবাবু জাহাজের রেলিং ধ'রে একবার দাঁড়ালেন। এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর চোখদুটো উঠল বেজায় চম্কে। উত্তেজিত স্বরে তিনি ডাকলেন, “জয়ন্ত! মাণিক! বিমলবাবু! কুমারবাবু!”
সবাই এদিকে-ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, সুন্দরবাবুর জোর তলবে তাড়াতাড়ি সেখানে ছুটে এল।
সুন্দরবাবু বিবর্ণমুখে সমুদ্রের দিকে অঙ্গুলি-নির্দেশ করলেন।
জাহাজের পাশেই নীলজলে ভাসছে মানুষের একটা রক্তহীন সাদা মৃতদেহ। তার ভাবহীন, নিপলক, বিস্ফারিত দুটো চোখ শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে আছে জাহাজের দিকে। তার আড়ষ্ট দেহে বিন্দুমাত্র জীবনের চিহ্ন নেই বটে, কিন্তু কি আশ্চর্য্য, স্রোতের বিরুদ্ধে বেগবান্ জাহাজের সঙ্গে-সঙ্গেই সেটা ভেসে চলেছে সোঁ-সোঁ ক'রে!
হতভম্ব মুখে জয়ন্ত বললে, “আমি কি স্বপ্ন দেখছি?”
বিমল কিছু বললে না, রেলিংয়ের উপরে ঝুঁকে প'ড়ে আরো ভালো ক'রে মূর্তিটাকে দেখতে লাগল।