পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অধ্যায় : এক


ভারতের সবচেয়ে ধনী জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে ‘ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক’ চ্যানেলের ডিরেক্টর ফ্রেঞ্চ রবার্ট যোগাযোগ করলেন আমার সঙ্গে। উদ্দেশ্য, আমার উপর একটা তথ্যচিত্র তৈরি করা। রবার্টের একটি অনুরোধ—ভারতের সবচেয়ে ধনী জ্যোতিষীর ভণ্ডামির মুখোশ ছিঁড়ে দেখাও।

 আচার্য সত্যানন্দ একজন জ্যোতিষী। বর্ণময় তাঁর জীবন। কী ক্লায়েন্ট দেখতে কী একগাদা টিভি প্রোগ্রামে যাত্রার রাজার মতো পোশাকে হাজির থাকেন। মাথায় টুপি সাদা-কালো ডিজাইনার লম্বা দাড়ি কথা বলেন অবাঙালির মতো বাংলা উচ্চারণে। তাঁর একটি বিমান আছে। থাকেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে বিশাল প্রাসাদে। প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র। রয়েছে একাধিক কম্পিউটর। টাস্ক রোডে একটা এয়ারক্রাফট্ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়েছেন কোটি টাকা খরচ করে। প্রায় সময়-ই সত্যানন্দকে ঘিরে থাকে ৮/১০ জন তাগড়াই যুবক। বিজ্ঞাপনে নাকি খরচ করেন বছরে কোটি টাকা। বর্তমানে জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ১৫ বছর আগেও একটি অশ্লীল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন। তখন সত্যানন্দর নাম ছিল প্রদীপকুমার বিশ্বাস। থাকতেন উত্তর শহরতলির সিঁথির ছোট্ট বাসায়। কয়েক বছরে আর্থিক অবস্থা থেকে কথা বলার স্টাইল—সব পাল্টে গিয়েছিল। এখন তাঁর বাড়িতে বড় বড় লাল বাতিওয়ালা গাড়ির আনাগোনা। রাজ্যের তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্তারা তাঁর বাড়িতে মাঝে-মধ্যে আসেন। ফ্রেঞ্চ রবার্ট যেমন বর্ণময় জ্যোতিষী চেয়েছিলেন, সত্যানন্দ ঠিক তেমনটি। সব শুনে রবার্ট নেচে উঠলেন—একেই বে-আব্রু করো।

 নিখুঁত ও বড়ো সড়ো একটা পরিকল্পনা করে ক্যামেরার সামনে প্রমাণ করলাম সত্যানন্দর ভণ্ডামি। দিনটা ছিল ৯ মার্চ ২০০৫ সাল। গোটা কাহিনি লিখতে একটা বই হয়ে যাবে। সেটা লিখব ‘যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা’ ৩য় খণ্ডে।

 সেই দীর্ঘ ও নাটকীয় কাহিনির মধ্যে না গিয়ে শুধু এটুকু বলি—সে’রাতেই সত্যানন্দ তাঁর একটি LIVE অনুষ্ঠানে ভক্তদের কাছে আমাদের হত্যা করার ফতোয়া দিলেন। ‘আমাদের’ মানে আমরা যারা ভণ্ডামি ফাঁসে সক্রিয় ভাবে অংশ

২৫