পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আট


ঈশ্বরের ভর

ঈশ্বরের ভর কখনও মানসিক রোগ, কখনও অভিনয়

মনসা, শীতলা, কালী, তারা, দুর্গা, চড়ক পুজোর সময় শিব এবং কীর্তনের আসরে রাধা বা গৌরাঙ্গের ভর, এমনি আরও কত পরিচিত, অল্পপরিচিত, অপরিচিত ঠাকুর-দেবতারা যে মানুষের ওপর ভর করে তার ইয়ত্তা নেই। ঠাকুরে ভর হওয়া মানুষগুলোর বেশিমাত্রায় খোঁজ মিলবে মফস্বলে গ্রামে-গঞ্জে। শহর কলকাতাতেও অবশ্য ভর হওয়া মানুষের সাক্ষাৎ মেলে। ভবিষ্যৎ জানতে, অসময় থেকে উত্তরণের জন্য দৈব ওষুধ পেতে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বহু মানুষই এইসব ভর হওয়া মানুষগুলোর দ্বারস্থ হন। অনেক ক্ষেত্রে ঠাকুরে ভর হওয়া মানুষগুলো এমন সব অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য আচরণ করেন যে সাধারণ বুদ্ধিতে অনেকে এতে অলৌকিকের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। বিশ্বাস করেন মানুষটির শরীর ঈশ্বর দখল করাতেই এমনটি ঘটছে।

 কৈশোরের একটি ঘটনা। তখন দমদম পার্ক-এ থাকি। আমার এক বন্ধুর বাড়িতে মাঝে-মধ্যে নাম গানের আসর বসত। শুনেছিলাম নাম-গান শুনতে শুনতে বন্ধুর মায়ের ওপর রাধার ভর হত। একবার দেখতে গেলাম। বন্ধুর

মা নাম সঙ্কীর্তন করতে করতে এক সময় হঠাৎ প্রচণ্ডভাবে মাথা দোলাতে লাগলেন। মনে হতে লাগল মাথাটাই বুঝি বা গলা থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে। উম্মত্তের মতো আচরণ করতে লাগলেন। ভক্তরা তাঁকে ধরাধরি করে এক জায়গায় বসালেন। ভক্তরা অনেকেই এই সময় বন্ধুর মাকে শুয়ে পড়ে প্রণাম জানাচ্ছিলেন। সেদিন শারীর-বিদ্যা বিষয়ে জ্ঞানের অভাবে বন্ধুর মায়ের এমন অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ আমার অজানা ছিল, তাই বিস্মিত হয়েছিলাম। আজ কিন্তু শারীর-বিদ্যার কল্যাণে জানতে পেরেছি সে-দিন আমার বন্ধুর মা নাম-সঙ্কীর্তন করতে করতে ভক্তিরসে, ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে যা যা

৩৪১