কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমা’য়ের মেলায় ভর
নদীয়া জেলার কল্যাণী ঘোষপাড়ায় প্রতি বছর দোল উৎসবে সতী’-মার বিরাট মেলা বসে। সার্কাস, সিনেমা, ম্যাজিক, নাগরদোলা, বাউলের গান, দোকান-পাঠ আর লক্ষ লক্ষ ভক্ত। সমাগমে মেলা আশপাশের বিরাট অঞ্চলকে জাঁকিয়ে রাখে। ‘কর্তাভজা’ সম্প্রদায়ের আউলিয়া এই মেলায় দেড়শো-দুশো তাঁবু ও আখড়া হয়, পুলিশ ফাঁড়ি বসে। পশ্চিমবাংলার বহু মানুষ নানা মানসিক ও প্রার্থনা নিয়ে আসেন। কেউ আসেন রোগমুক্তির কামনা নিয়ে, কেউ বা আসেন সন্তান কামনায়, কেউ বা অন্য কোনও সমস্যা নিয়ে। এখানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ‘গণ-ভর’। কয়েক শত পুরুষ ও মহিলার উপর সতী’-মার ভর হয়।
সতীমায়ের বাকসিদ্ধ হওয়ার যে কাহিনি ভক্তদের মুখে মুখে ঘোরে, তা এরকম। অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় ভাগ্য-অন্বেষণের রামশরণ পাল এসে বসবাস শুরু করেন নদীয়া জেলার কল্যাণীর কাছে ঘোষপাড়ায়। বিয়ে করেন সদগোপ জমিদার গোবিন্দ ঘোষের মেয়ে সরস্বতীকে। আউলচাঁদ ফকিরের সঙ্গে পথে আলাপ রামশরণের। রামশরণ তাঁকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। আউলচাঁদ ডেরা বাঁধেন রামশরণের বাগানের ডালিমতলায়। পাশেই হিমসাগর পুকুর দেখে ফকির আনন্দে আত্মহারা। বললেন, “বাঃ, এটায় চান করলেই গঙ্গা চানের কাজ হয়ে যাবে। এর সঙ্গে গঙ্গার যোগাযোগ রয়েছে রে।”
অদ্ভুত ব্যাপার, তারপর থেকে গঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে পুকুরেও জোয়ার-ভাটা হতো। রামশরণ ও সরস্বতী বুঝেছিলেন, ফকির বাকসিদ্ধ। একদিনের ঘটনা, সরস্বতী কিছুদিন ধরেই অসুখে ভুগছিলেন। সে-দিন অসুস্থতা খুব বাড়তে চিন্তিত রামশরণ দৌড়ালেন কবিরাজ মশাইকে ধরে আনতে। পথে আউলচাঁদ রামশরণকে থামালেন। সরস্বতীর অসুস্থতার খবর শুনে বললেন, “তোকে আর কবিরাজের কাছে যেতে হবে না। আমাকে বরং তোর বউয়ের কাছে নিয়ে চল।”
রামশরণের কী যে কি হলো। কবিরাজের কাছে না গিয়ে আউলচাঁদকে নিয়ে ফিরলেন। ফকির সরস্বতীর শরীরে হাত বুলিয়ে দিতেই রোগের উপশম হল। মুগ্ধ, ভক্তি আপ্লুত রামশরণ ও সরস্বতী আউলচাঁদ ফকিরের কাছে দীক্ষা নিলেন। সিদ্ধপুরুষ আউলচাঁদ জানান, সরস্বতী বাকসিদ্ধ হবেন। পরবর্তী ছয় পুরুষও হবেন বাকসিদ্ধ। রামশরণ ও সরস্বতীর কর্তাভজা সম্প্রদায়ের কর্তা হয়ে আউলিয়া ধর্মমত প্রচার করতে শুরু করেন। সরস্বতীর বাকসিদ্ধ ক্ষমতার কথা প্রচারিত হতে