জয়ধ্বনি এইসব মিলিয়ে অদ্ভুত একটা ভক্তিরসাশ্রিত পরিবেশ আরও বেশি প্রভাবিত করত। তারই ফলে গদিতে বসলেই আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মনে করতে থাকতাম আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত শক্তি প্রকাশিত হয়েছে। আমার কথাগুলো সতীমারই নির্দেশ।
আপনার বইটার ‘বিশ্বাসে অসুখ সারে’ অধ্যায়টা পড়ার পর আমার মনে হচ্ছে, যারা সতীমার মেলায় এসে রোগ মুক্ত হচ্ছে, তারা সতীমার প্রতি বিশ্বাসে, আমার কথায় বিশ্বাস করেই রোগ মুক্ত হচ্ছে। এবার দোলের মেলায় যাদের ভর হয়েছিল, তাদের লক্ষ্য করে আমার মনে হয়েছে আপনার কথাই সত্যি! ওরা প্রত্যেকেই প্রচণ্ড আবেগে, অন্ধবিশ্বাসে হিস্টিরিয়া রোগের শিকার হয়েছিল। একজনের ভর দেখে আরেকজন, তাকে দেখে আরেকজন, এভাবেই জনে জনে স্রেফ হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উন্মত্ততা দেখিয়েছে, আর তাকেই সাধারণ মানুষ মনে করেছে সতীমার কৃপার ফল, স্থান মাহাত্ম্য ইত্যাদি । যখনই দেখেছি ভরে পাওয়া মানুষগুলো উন্মত্ততা প্রকাশ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েছে তখনই ওদের হাতে একটা করে ফুল ধরিয়ে দিয়েছি। যারা এখানে আসে তারা এও জানে আমি ফুল হাতে দিলে ভর কেটে যায়। তাদের এই অন্ধ-বিশ্বাসের ফলেই ফুল হাতে পেতে ভর কেটেছে।
১৯ মার্চ ’৯০ শেষ সন্ধ্যায় বাবুমশার অজিতকুমার কুণ্ডুকে যুক্তিবাদী অজিত কুণ্ডু করে নিয়েছি। লিখিত প্রতিজ্ঞাপত্রে জানিয়েছেন—আগামী বার থেকে আর বাবুমশায়ের ভূমিকা নেবেন না। প্রত্যাশা রাখি, তিনি কথা রাখবেন।
আর একটি হিস্টিরিয়া ভরের দৃষ্টান্ত
এবার যে ঘটনার কথা বলছি সেটা ঘটেছিল তেলাড়ী গ্রামে। তেলাড়ী, সাতগাছিয়া বিধানসভার অন্তর্গত একটি গ্রাম। খেটে খাওয়া গরিবরাই সংখ্যাধিক। শিক্ষিতের হার শতকরা কুড়ি ভাগ। গ্রামের প্রভাবশালী মণ্ডল পরিবারের উদ্যোগে প্রতি বছর একবার মহোৎসব হয়। গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকেই চাল, ডাল, টাকা তোলা হয়। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলেই এই মহোৎসবে যোগ দেয়।
বছর কয়েক আগে পূর্ণিমার পরের দিন মহোৎসবের অনুষ্ঠানে সহদেব পণ্ডিতের বউয়ের ভর হল। বউটি উপোস করে ঘুরে ঘুরে মাগন মেগে (ঈশ্বরের নামে ভিক্ষা চাওয়া) এসে স্নান করে ভিজে কাপড়ে গণ্ডি কাটছিলেন।