পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরের ভর
৩৫১

দু-তিনটে গণ্ডি কটার পর উঠেই কেমন নাচতে লাগলেন। নেচে নেচে ঘুরতে ঘুরতে বলতে লাগলেন, “তোরা ঠিকমতো আমার পুজো দিসনি। তোদের পুজোয় ত্রুটি রয়েছে।”

 ধুলো-কাদা মাখা শাড়ি, খোলা লম্বা ধুলো মাখা ভেজা চুল, পাগলের মতো দৃষ্টি, অনর্গল কথা শুনে উপস্থিত প্রায় সকলেই ধরে নিলেন—সহদেবের বউয়ের ঠাকুরের ভর হয়েছে।

 মহিলাটি পুজো মণ্ডপ ঘুরছেন আর নির্দেশ দিয়ে চলেছেন কী কী করতে হবে। ব্যবস্থাপকরা প্রত্যেকেই ওঁর কথাকেই ঠাকুরের নির্দেশ ধরে নিয়ে তা পালন করতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলেন। ঠাকুরের আদেশ অমান্য করার পরিণতির কথা ভেবে তাঁদের চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না!

 আবার নতুন করে পুজোর আয়োজন চলতে লাগল। মহিলার আদেশে হরিনামের দল নামগান সর্বোচ্চ সুর তুলে শুরু করলেন, খোলের উপর চাঁটিও পড়তে লাগল আরও জোরে। এমন এক অসাধারণ অলৌকিক দেবমাহাত্ম্য যাঁরা দেখার সুযোগ পেলেন তাঁরা নিজের জীবন ধন্য মনে করে অনেকেই আনন্দে কেঁদে ফেললেন। ঝড়ের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মহোৎসবের চারিপাশে শুধু মানুষ, আর মানুষ। অনেকেই ধারণা ব্যক্ত করলেন, “আজকালকার ছেলে-ছোকরাদের দিয়ে কি আর আগের মতো করে ভক্তিভরে পুজো হয়? কেউবা বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে হাতটাও ভালো করে না ধুয়ে পুজোর আয়োজনে লেগে পড়ল। আরে, পুজো কি তোদের ছেলেখেলা?”

 এই ধরনের একটা মানসিকতা হয় তো মহিলাটিরও ছিল। হয় তো পরম ভক্ত মহিলাটির পুজোর আয়োজনের অনেক কিছুই মনে ধরেনি। বরং বিরক্তিতে মন ভরেছে। তারই ফলে এক সময় মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন তার উপর দিয়েই বর্ষিত হচ্ছে ঈশ্বর নির্দেশ—বাস্তবে যা ছিল একান্তভাবে তাঁরই নির্দেশ।

চিন্তামণির ভর মানসিক অবসাদে

 হিস্টিরিয়া ছাড়া ম্যানিয়াক ডিপ্রেসিভ রোগীরাও অনেক সময় নিজেদের মধ্যে ঈশ্বরের সত্তার প্রকাশ ঘটেছে বলে বিশ্বাস করে অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা করতে থাকেন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব নয়। ম্যানিয়াক ডিপ্রেসিভ রোগীরাও বেশির ভাগই অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত এবং কুসংস্কারে ও ধর্মীয় বিশ্বাসে আচ্ছন্ন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই মহিলা এবং বিবাহিতা। পারিবারিক