স্বাস্থ্য ও ঔষধ, পরিবেশ দূষণ, জল, গৃহ, শিল্পক্ষেত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শাস্তি।
না, মানুষের কুসংস্কার বিষয়ের কোনও স্থান ছিল না জাঠার বিষয়গুলোর মধ্যে। বিপুল অর্থ বায়ের এই জন-বিজ্ঞান জাঠা তাদের কাছে এগিয়ে আসা শোষিত অন্ধ সংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষগুলোকে বিজ্ঞানমনস্ক করার চেষ্টা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিল। পশ্চিমবাংলার কিছু কিছু জায়গায় অবতারদের কিছু কিছু কৌশল সাধারণ মানুষদের কাছে ফাঁস করার অনুষ্ঠান হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলো হয়েছিল নেহাৎই হালকা চালে, সাধারণ মানুষকে ম্যাজিক দেখানোর মতো করে, অবসর বিনোদনের অনুষ্ঠানের মতো করে। পশ্চিমবঙ্গে এই জাঠা ছিল ধর্ম ও জ্যোতিষ বিশ্বাসের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে। ২ অক্টোবর মালদায় জাঠা উদ্বোধন করলেন এমন এক বিজ্ঞানী যাঁর নাম আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি ধর্মানুষ্ঠান, ভাগবতপাঠের আসর, অবতারের জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে। ৭ অক্টোবর কলকাতার টালাপার্কে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান-জাঠার এক অনুষ্ঠানে একটি পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। জনৈক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী 'শক্তি' বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুরুতেই বললেন, ‘যবে থেকে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি—।' বাক্যটা শেষ হবার আগেই সভার গুঞ্জনে সচেতন হয়ে উঠলেন। বক্তব্য পাল্টে বললেন,—‘অবশ্য আমরা বিবর্তনবাদে পড়েছি কেমন করে মানুষ এল।' জাঠার উত্তর কলকাতা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি দাপটে বিজ্ঞান সভার পরিচালনা করলেন, দু হাতের আঙুলে গোটা চার-পাঁচেক গ্রহরত্নের আংটি ধারণ করে।
এমন দ্বিচারিতার উদাহরণ এখানে শেষ নয়। এবার আপনাদের যাঁর কথা বলছি, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত বামবুদ্ধিজীবী লেখক। বস্তুবাদ প্রসঙ্গ-টসঙ্গ নিয়ে অনেক বইও লিখেছেন। এই বুদ্ধিজীবী ‘জন-বিজ্ঞান' আন্দোলনের নেতাদের আমন্ত্রণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সোচ্চারে জানালেন, বিজ্ঞান আন্দোলনের নামে ধর্মকে কোনও আঘাত নয়।
মাস কয়েক পরে তিনিই আবার 'গণ-বিজ্ঞান' মঞ্চে উঠে ঘোষণা করলেন, সাধারণের কাছে ধর্মের বিজ্ঞান-মনস্কতা বিরোধিতা'র স্বরূপকে তুলে ধরতে হবে, চিনিয়ে দিতে হবে, আঘাত হানতে হবে।