পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যুক্তিবাদ প্রসঙ্গ
৩৫

পরজীবী এইসব বুদ্ধিজীবীরা যুক্তিবাদী আন্দোলনের
পক্ষে নিঃসন্দেহে ভয়াবহ বিশাল বাধা হয়ে উঠতে
পারেন। কারণ পরিচিত শত্রুর বিরুদ্ধে
লড়াই করা সহজ, অপরিচিত
শত্রু চিরকালই ভয়াবহ।

 অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদার ও জ্যোতিষীদের বিরোধিতার স্বরূপ আমাদের জানা, তাই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। কিন্তু এইসব ভণ্ড যুক্তিবাদীদের মুখোশের আড়াল সরাতে না পারলে তাদের অজ্ঞাত শত্রুরা, গোপন আঘাত আমাদের আন্দোলনকে বহুগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 '৮৯-এ পিপলস্ সায়েন্স কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদানের জন্য আমি এবং আমাদের সমিতি আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। অধিবেশনে আমাদের সমিতির বক্তব্য ছিল-বিজ্ঞান আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পরিবেশ দূষণ, জল সমস্যা, বাসগৃহ ইত্যাদি সমস্যার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েও আমাদের সমিতি মনে করে এর সঙ্গে কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব স্বীকার করা উচিত। বিজ্ঞান আন্দোলনে যদি বিজ্ঞান মনস্কতা গড়ার আন্দোলনের, কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলনের স্থান না থাকে, তবে সেটা আর যাই হোক, বিজ্ঞান আন্দোলন নয়। পিপলস্ সায়েন্স কংগ্রেস আন্দোলনের বিষয় হিসেবে 'ধর্মনিরপেক্ষতা'কে স্থান দিয়েছেন। কিন্তু যুক্তিবাদী চেতনা গড়ার আন্দোলনকে পাশে সরিয়ে রেখে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা গড়ার আন্দোলন, গাছের গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়ার মতোই বাতুলতা। 'কুসংস্কার মুক্তি' এবং ‘বিজ্ঞান-মনস্ক চেতনা'কে স্থান না দিয়ে আপনার যদি আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান, তবে সেটা হবে মেকি বিজ্ঞান আন্দোলন, বিজ্ঞান আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান আন্দোলন।

 আমাদের বক্তব্যেরই জের টেনে বক্তব্য রাখলেন, কেরলের 'শাস্ত্রীয় সাহিত্য পরিষদ'-এর প্রতিনিধি। কেরল শাস্ত্রীয় সাহিত্য পরিষদ কাগজে-কলমে ভারতবর্ষের বৃহত্তম বিজ্ঞান সংগঠন। তাদের প্রতিনিধি সোচ্চারে জানালেন—আমরা আপনাদের সমিতির কর্মধারা সম্পর্কে কিছু কিছু শুনেছি। আমাদের পক্ষে এক্ষুনি কুসংস্কার বিরোধী কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করা অসম্ভব। কারণ এর দ্বারা মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।