সে সব শেখার কোনও সম্ভাবনাই তাঁর ছিল না। তবে সে সব গালাগাল তিনি দিয়েছিলেন কী ভাবে?’
আমার উত্তর ছিল—শেখার সম্ভাবনা না থাকলেও শোনার সম্ভাবনা কাকিমার ক্ষেত্রে আর দশজনের মতো অবশ্যই ছিল। ভদ্র মানুষেরা নোংরা গালাগাল করেন না। এটা যেমন ঠিক, তেমনই সত্যি, ভদ্র মানুষও তাঁদের জীবনের চলার পথে কাউকে না কাউকে নোংরা গালাগাল দিতে শুনেছেন।
কলসি দাঁতে করে তোলা বা লজ্জা ভুলে প্রচণ্ড লাফ দেওয়ার
মত প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ হিস্টিরিয়া রোগীর পক্ষে স্বাভাবিক
ঘটনা। মানসিক অবস্থায় রোগী নিজেকে অর্থাৎ নিজের
সত্তাকে সম্পূর্ণ ভুলে যান। গভীরভাবে বিশ্বাস করে
ফেলেন— তাঁকে ভূতে ভর করেছে। তাঁর মধ্যে
রয়েছে ভূতের অসাধারণ ক্ষমতা ও বিশাল
শক্তি। ফলে সামান্য সময়ের জন্য শরীরের
চূড়ান্ত শক্তি বা সহ্য শক্তিকে ব্যবহার
করে স্বাভাবিক অবস্থায় যা অসাধ্য,
তেমন অনেক কাজ
করে ফেলেন।
হিস্টিরিয়া রোগ সম্বন্ধে ভালমতো জানা না থাকায় হিস্টিরিয়া রোগীদের নানা আচরণ ও কাজকর্ম সাধারণ মানুষদের চোখে অদ্ভুত ঠেকে। তাঁরা এগুলোকে ভূতুড়ে কাণ্ড-কারখানা বলে ধরে নেন।
প্রথমে বিশ্ব মহাযুদ্ধের সময় এমন কিছু সৈনিক চিকিৎসিত হাতে আসে যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে অথবা ডান হাত পক্ষাঘাতে অবশ কিংবা অতীত স্মৃতি হারিয়েছে। এদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে চিকিৎসকরা একমত হন এরা কোনও শারীরিক আঘাত বা অন্য কোনও শারীরিক কারণে এইসব রোগের শিকার হয়নি। রোগের কারণ সম্পূর্ণ মানসিক। এরা হিস্টিরিয়ায় ভুগছে। অনবরত রক্তপাত, হত্যা গোলা-গুলির শব্দ রোগীদের চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, কিছুতেই তারা এত রক্তপাত, এত হত্যা, এত শব্দ সহ্য করতে পারছিল না। মন চাইছিল যুদ্ধ ছেড়ে পালাতে। বাস্তবে যা আদৌ সম্ভব ছিল না। যুদ্ধ ছেড়ে পালানো মানেই দেশদ্রোহিতা, ধরা পড়লেই কঠোর শাস্তি। পালানোর ইচ্ছা ও পালাতে ভয়—দুয়ের সংঘাত রূপান্তরিত হয়েছে হিস্টিরিয়ায়।