’৮৭-র জানুয়ারিতে কলকাতার টেলিফোন অপারেটরদের মধ্যে তড়িদাহতের ঘটনা এমনই ব্যাপকতা পায় যে, অটোম্যানুয়াল এক্সচেঞ্জ, অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জের টেলিফোন অপারেটররা আন্দোলনে নেমে পড়েন। কানের টেলিফোন রিসিভার থেকে তাঁরা এমনভাবে তড়িদাহত হতে থাকেন যে অনেককে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করা হয়। পরে মেডিকেল রিপোর্টে তড়িদাহতের কোনও সমর্থন মেলেনি। বরং জানা যায় তড়িদাহতের ঘটনাগুলো ছিল সম্পূর্ণ ভয়জনিত। এটা গণ-হিস্টিরিয়ার একটি উদাহরণ।
এই প্রসঙ্গে আরও একটি উদাহরণ হাজির করার লোভ সামলাতে পারলাম না। কয়েক বছর আগে কলকাতা ও তার আশেপাশে এক অদ্ভুত ধরনের রোগের আবির্ভাব ঘটেছিল। জনতা নাম দিয়েছিল ‘ঝিনঝিনিয়া’ রোগ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কিছু লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়। রোগী হঠাৎ কাঁপতে শুরু করত অথবা সারা শরীরে ব্যথা শুরু করত। সেইসঙ্গে আর এক উপসর্গ রোগী নাকি অনুভব করত তার লিঙ্গ শরীরের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। গণ-হিস্টিরিয়া থেকেই এই উপসর্গগুলো রোগীরা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করেছিল।
এক ধরনের ভূতে পাওয়া রোগ স্কিটসোফ্রেনিয়া
স্কিটসোফ্রেনিয়া রোগের বিষয়ে বোঝার সুবিধের জন্য একটু বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন। গতিময়তা মস্তিষ্ককোষের একটি বিশেষ ধর্ম। সবার মস্তিষ্ককোষের গতিময়তা সমান নয়। যাদের গতিময়তা বেশি, তারা যে কোনও বিষয় চটপট বুঝতে পারে। বহু বিষয়ে জানার ও বোঝার আগ্রহ ও ক্ষমতা আছে। খুব সাবলীলভাবেই বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারে এবং সহজেই এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গের চিন্তায় বা আলোচনায় নিজের মস্তিষ্ককোষকে নিয়োজিত করতে পারে।
সাধারণভাবে রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, প্রশাসক শ্রেণির মানুষদের মস্তিষ্ককোষের গতিময়তা বেশি। এই ধরনের মস্তিষ্ককোষের অধিকারীদের বলা হয় প্রাণচঞ্চল বা স্যাংগুইনাস (Sanguineous)।
চিন্তাবিদ, গবেষক, নহিত্যিক, বিজ্ঞানী শ্রেণির মানুষেরা সাধারণভাবে কোনও বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে ভালবাসেন। সবকিছুকে ভালমতো জানতে চান, বুঝতে চান। এক সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে ভালবাসেন না। এরা আত্মস্থ বা ফ্লেমেটিক (Phlegmatic) ধরনের মস্তিষ্কের অধিকারী।