পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূতের ভর
৪৭

একাধিকবার বিদেশ গিয়েছেন। এঁরা প্রত্যেকেই ভূতের (?) খপ্পরে পড়ে এমনই নাজেহাল অবস্থায় পড়েছিলেন যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। ১৯৮৭-র ৭ মে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনের বক্তব্য ছিল—এক অশরীরী আত্মার দ্বারা আমাদের পারিবারিক শান্তি সম্পূর্ণ বিপর্যন্ত। কোনো সহৃদয় ব্যক্তি এই বিপদ থেকে উদ্ধার করলে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

 বিজ্ঞাপনটি দেখে আমাদের সংগঠনের জনৈক সদস্য নেহাতই কৌতূহলের বশে একটি চিঠি লিখে জানায়—বিস্তৃতভাবে ঘটনাটি জানান। হয়তো সাহায্য করা সম্ভব হবে।

 ইনল্যান্ডে উত্তর এল। পত্র-লেখিকা ও তাঁর পরিবারের সকলেরই নাম প্রকাশে অসুবিধে থাকায় আমরা আমাদের বোঝার সুবিধের জন্য ধরে নিলাম পত্র-লেখিকার নাম মঞ্জু, বড় ছেলে চন্দ্র, ছোট ছেলে নীলাদ্রি, স্বামী অমরেন্দ্র। মঞ্জু দেবী জানালেন—‘প্ল্যানচেট’ নামে একটা বই পড়ে ১৯৮৪ সালের ২৫ আগস্ট শনিবার তিনি, স্বামী ও দুই ছেলে প্ল্যানচেট করতে বসেন। প্রথমে একটি বৃত্ত এঁকে রেখার বাইরের দিকে A থেকে Z পর্যন্ত এবং রেখার ভিতরের দিকে ১ থেকে ৯ এবং ০ লিখে বৃত্তের কেন্দ্রে একটা ধূপদানিতে ধূপ জ্বেলে সবাই মিলে ধূপদানিকে ছুঁয়ে থেকে এক মনে কোনও আত্মার কথা ভাবতে শুরু করতেন। একসময় দেখা যেত ধূপদানিটা চলতে শুরু করেছে এবং একটি অক্ষরের কাছে যাচ্ছে। অক্ষরগুলো পর পর সাজালে তৈরি হচ্ছে শব্দ। শব্দ সাজিয়ে বাক্য। একটি বাক্য হতে এত দীর্ঘ সময় লাগছিল যে ধৈর্য রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

 তাই প্ল্যানচেট বইয়ের নির্দেশমতো একদিন ওঁরা বসলেন রাইটিং প্যাড ও কলম নিয়ে। প্রথম কলম ধরেছিলেন মঞ্জু দেবী। প্রথম দিন বেশ কিছুক্ষণ বসার পর এক সময় হাতের কলম একটু একটু করে কাঁপতে শুরু করল। মঞ্জু দেবীই প্রশ্ন করলেন, 'আপনি কে? উত্তরে লেখা হল ‘রবীন্দ্রনাথ’। আরও কিছু প্রশ্নোত্তরের পর একে একে প্রত্যেকেই কলম ধরেন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আত্মা এসে রাইটিং প্যাডে লিখে তাঁদের উপস্থিতির কথা জানিয়ে যায়। আত্মা আনার জন্য বেশ কিছুক্ষণ গভীরভাবে চিন্তা করতে হত বটে, কিন্তু একবার আত্মা এসে গেলে হুড়মুড় করে লেখা বের হত। প্রথমদিন ভোর রাত পর্যন্ত কলম চলতে থাকে তারপর থেকে প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত চলত আত্মা আনার খেলা। এ এক অদ্ভুত নেশা।