মঞ্জুদেবী সাহিত্যে ডক্টরেট, ভক্তিমতী আবেগপ্রবণ মহিলা। দীক্ষা নেওয়ার পরবর্তীকালে কিছু কিছু নারীর প্রতি গুরুদেবের আসক্তির কথা শুনেছিলেন। গুরুদেব ছিলেন অতি সুদর্শন। মঞ্জুদেবীও এককালে সুন্দরী ছিলেন। প্ল্যানচেটের আসরে ধূপদানির চলা দেখে মঞ্জুদেবী ধরে নিয়েছিলেন, দেহাতীত আত্মাই এমনটা ঘটাচ্ছে। একসময় ধুপদানি ছেড়ে কলমের ডগাতেও বিভিন্ন আত্মাকে বিচরণ করতে দেখেছেন। গুরুদেবের আত্মা হাজির হতেই অনেক গোলমাল দেখা দিয়েছে। গুরুদেবের নারী আসক্তির যে সব কাহিনি শুনেছিলেন, বিশ্বাস করেছিলেন, সেই বিশ্বাস থেকেই এক সময় মঞ্জুদেবীর মনে হয়েছিল—গুরুদেবের আত্মা আমার আহ্বানে হাজির হওয়ার পর আমার প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়বেন না তো? তাঁর নারী পিপাসা মিটে না থাকলে এমন সুযোগ কি ছেড়ে দেবেন? আমাকেই ভোগ করতে চাইবেন না তো?
এই সব চিন্তাই একসময় স্থির বিশ্বাস হয়ে গেড়ে বসেছে—গুরুদেব এই সুযোগে নিজের কদর্য ইচ্ছেগুলোকে চরিতার্থ করে চলেছেন, আমার শরীরকে ভোগ করে চলেছেন।
প্ল্যানচেটের আসরে অংশ নেওয়ার অতি আবেগপ্রবণতা ও বিশ্বাস থেকেই এক সময় মঞ্জুদেবীর মধ্যে এসেছে শ্রবণানুভূতি ও স্পর্শানুভূতির অলীক বিশ্বাস।
২৬ জুলাই মঞ্জুদেবী ও ছোট ছেলেকে আসতে বললাম। ওঁরা এলেন। ওঁরা যেমন ভাবে কাগজ-কলম নিয়ে প্ল্যানচেটের আসরে বসলেন তেমনিভাবেই একটা আসর বসালাম। দুজনের অনুমতি নিয়ে সে দিনের আসরে ছিলেন একজন সাংবাদিক, একজন চিত্র সাংবাদিক ও আমাদের সমিতির দুই সদস্য।
আসর বসার আগে মঞ্জুদেবী ও নীলাদ্রির সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কিছু কথা বললাম। টেবিলে বসলেন মঞ্জুদেবী ও নীলাদ্রি। রাইটিং-প্যাড আর কলম এল। তিনটে ধূপকাঠি জ্বালানো হল। মঞ্জুদেবীর কথামতো নীলাদ্রি কলম ধরলেন। মিনিট দুয়েক পরেই দেখা গেল নীলাদ্রির হাত ও কলম কাঁপছে। মঞ্জুদেবী বললেন-উনি এসে গেছেন। তারপর তিনিই প্রশ্ন করলেন—আপনি কে? কলম লিখল—গুরুদেবের নাম।
এরপর মঞ্জুদেবী অনেক প্রশ্নই করলেন, যেমন—‘আপনি আমাকে ছাড়ছেন না কেন?’ ‘প্রবীরবাবু বলছেন, আপনি তাঁকে কথা দিয়েছেন আমাকে ছেড়ে যাবেন। কথা রাখছেন না কেন?’ ইত্যাদি।
অলৌকিক নয় লৌকিক/২য়—৪