পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সম্মােহন-আত্মসম্মােহন
১৪১

খাচ্ছেন। বাস্তবে এমনটি ঘটে না, এবং সবই হল ম্যানড্রেকি গল্পের প্রভাবের ফল বা জাদুকরদের মিথ্যে সম্মােহনের ফল।

 অনেকে এমনও ভাবে, সম্মােহন করতে পারেন এমন লােকের কাছে যাওয়া দস্তুরমতাে বিপজ্জনক। ওরা সম্মােহিত করে চুরি খুন-খারাপি—সবই করিয়ে নিতে পারে। এসবই, সম্মােহন সম্বন্ধে না জানার ফল।

সম্মােহনের ইতিহাস, নানা মত

 সম্মােহন’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ “হিপনােটিজম’ (Hypnotism)। হিপনােটিজম্ কথাটি আবার এসেছে হিপনােসিস (Hypnosis) কথা থেকে। ‘হিপনােসিস কথার অর্থ ‘ঘুম’। স্বাভাবিক ঘুমের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও সম্মােহন ঘুম আর স্বাভাবিক-ঘুম’ এক নয় কারণ অ-সাদৃশও কম নয়। তবে এটা বলা যায়, সম্মােহন জেগে থাকা ঘুমের একটা অন্তর্বর্তী অবস্থা।

 আধ্যাত্মিকতাবাদ ও জাদুবিদ্যার কবল থেকে মনােবিজ্ঞানকে মুক্ত করে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নত করতে প্রচুর বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। সম্মােহনের ক্ষেত্রে এই বাধা ছিল আরও বহুগুণ বেশি। কারণ, এখানে রয়েছে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার।

 ভারত, চীন ও গ্রীসের প্রাচীন সভ্যতার আদিপর্বে ধর্মীয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সম্মােহনের প্রচলন ছিল। আমাদের অথর্ববেদে সম্মােহনের উল্লেখ দেখতে পাই। মহাভারতেও সম্মােহনের প্রয়ােগের উল্লেখ আছে।

 প্রাচীনযুগে সম্মােহনের যে মর্যাদা ছিল মধ্যযুগে সেই মর্যাদা হারিয়ে সম্মােহন হয়ে দাঁড়ায় ‘ব্ল্যাক-ম্যাজিক’ বা ডাকিনীবিদ্যা। কাপালিক বা তান্ত্রিকরা ইচ্ছে করলেই তাদের সম্মােহন শক্তির দ্বারা ক্ষতি করতে পারে, এমন একটা ভ্রান্ত ধারণার বশ আজও অনেকেই এদের সযত্নে এড়িয়ে চলেন।

 আধুনিক যুগের সম্মােহনের সুচনা আঠারশ’ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। ডক্টর মেসমার অনেক দুরারােগ্য রােগীকে সম্মােহিত করে মস্তিষ্কে ধারণা সঞ্চার করে (Suggestion পাঠিয়ে) সারিয়ে তুললেন। মেসমারের সম্মােহন চিকিৎসার এই অভাবনীয় সাফল্যে ইউরােপে হৈ-হৈ পড়ে গেল। সম্মােহন পরিচিত হলাে ‘মেসমারিজম’ নামে।

 এরপর উনিশ শতকের মাঝামাঝি স্কটল্যাণ্ডের ডাক্তার জেমস ব্রেইড-এর সম্মােহন নিয়ে গবেষণা আবার আলােড়ন তুলল। তিনি সম্মােহনের নাম দিলেন ‘হিপনােসিস’