এইসব তান্ত্রিক বা ক্লেয়ারভয়ান্স (অতীন্দ্রিয় অনুভূতি) ক্ষমতার অধিকারীদের নানারকম ছাপানো প্রচারপত্র বা জীবনীর বইতে তাঁদের গুণগ্রাহীদের তালিকায় যেসব বিখ্যাত বিজ্ঞানী, ডাক্তার লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের নাম দেখেছি, তাতে সত্যিই চমকে গিয়েছি। কৌশলের সাহায্যে এই খেলা আমিও সফলভাবে দেখাতে সক্ষম। জানলে আপনিও পারবেন। এও জানি কৌশল ব্যবহারের রাস্তা বন্ধ করে দিলে এইসব অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির অধিকারীরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হবেন।
১৯৮৫-র ১৮ এপ্রিল আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের বিজ্ঞান বিভাগের একটি বিশেষ বেতার অনুষ্ঠানে আমি এমনি অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির অধিকারী বলে বহুল প্রচারিত পাগলাবাবার (বারাণসী) মুখোমুখি হয়েছিলাম। পাগলাবাবা আকাশবাণী ভবনে ঢুকলেন চারটে গাড়িতে জনা পনেরাে ভক্ত নিয়ে। আকণ্ঠ পান করে ও পাগলামী করে একটা ‘তান্ত্রিক’ মার্কা ইমেজ তৈরি করে ফেললেন। আকাশবাণীর প্রচুরকর্মী জুটে গেলেন। এক একজন এক একটা প্রশ্ন করছিলেন। বিজ্ঞান বিভাগের প্রযােজকের রুমে জমিয়ে বসে বাবা লিখে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিকঠাক উত্তর পেয়ে প্রত্যেকেই অবাক। পাগলাবাবা দাবি করলেন—এসব কথােপকথন রেকর্ড করা হােক। আমি বললাম, যা হবে স্টুডিওতে। এই মাছের বাজারে নয়। স্টুডিওতে (রেকর্ডিং রুমে) তাঁকে লিখে উত্তর দিতে দিইনি। উত্তর দিতে হয়েছিল মুখে মুখে। আমার তরফ থেকে প্রশ্ন করার জন্যে হাজির করেছিলাম চিত্র-সাংবাদিক কল্যাণ চক্রবর্তী, প্রকাশক ময়ূখ বসু ও একাধারে চ্যাটার্ড ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকাশক রঞ্জন সেনগুপ্তকে।
কল্যাণ প্রশ্ন করেছিলেন, “আমার সঙ্গের ক্যামেরাটার ক’টা ছবি তােলা হয়েছে।”
—“১৬ থেকে ১৭টা।” পাগলাবাবা বলেছিলেন।
ক্যামেরা ইণ্ডিকেটারে দেখা গেল ছবি তােলা হয়েছে ৩০টা।
ময়ূখ জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমার মানিব্যাগে কত টাকা আছে?”
—“৭৭টাকা।”
ব্যাগ খুলে দেখা গেল ২৭০টাকা।
রঞ্জন জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমার সিগারেটের প্যাকেটে ক’টা সিগারেট আছে।”
—“৭টা।”
সিগারেটের প্যাকেট খুলে দেখা গেল ৯টা সিগারেট রয়েছে।
‘অতীন্দ্রিয় দৃষ্টির অধিকারী’ তিনবারে তিনবারই ফেল করলেন। কেন বলুন তাে? কারণ ওই একটিই, তাঁকে লিখে উত্তর দিতে দিইনি।
লিখে উত্তর দেওয়ার সময় সম্ভাব্য সব উত্তর লিখে রেখে তারপর প্রশ্নকর্তার