পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৪
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

মতো লেগেই রয়েছে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি। ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলো শক্তিবৃদ্ধি করে চলেছে। ডাক দিচ্ছে প্রকাশ্যে আন্দোলন। জয়েন্দ্র সরস্বতীর দাবির মধ্যে রয়েছে ভারতের নাম করতে হবে ‘হিন্দুস্থান’, গরুকে করতে হবে জাতীয় পশু। আমরা দেখলাম জয়েন্দ্র সরস্বতী আন্দোলনের সূত্রে দিল্লিতে এলেন। প্রধানমন্ত্রী পদে থেকেও রাজীব গান্ধী সপরিবারে তাঁর আশীর্বাদ নিতে হাজির হলেন। সে সময়ে রাজীবের হাতে তখন বিজ্ঞান দপ্তরও।

 আমরা দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নুরুল হাসানের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস দলের মনোনয়নের প্রশ্নে বাতিল হল। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি তথা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বিরোধী নেতাদের জানালেন, নুরুল হাসানের নাম বাতিল করা হল, কারণ নুরুল হাসান নাস্তিক।

 ১৯৮৭-র ৪ সেপ্টেম্বর। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে,

রাজস্থানের দেওরালায় ধর্মীয়-উন্মাদ কিছু মানুষ মধ্যযুগীয় বর্বরতায়
অষ্টাদশী রূপ কানওয়ারকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে সতী করল।
আমরা দেখলাম ধর্মীয়-উন্মাদনার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নেতারা পিছু হটলেন। সর্বভারতীয়
কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এন. সি.
চতুর্বেদী প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, সতীদাহ
ব্যক্তিগত ধর্মীয় ব্যাপার।

 আমরা দেখলাম সতীর সমর্থনে জয়পুরের জনসভায়, রাজস্থানের রাজ্য জনতা দলের সভাপতি, রাজ্য লোকদল (বহুগুণ গোষ্ঠী) সভাপতির সরব উপস্থিতি।

 আমরা দেখেছি হরিয়ানার নির্বাচনের কংগ্রেস বিরোধী প্রচারে এন. টি. রামারাও নারায়ণ সেজে চৈতন্য রথম চেপে হিন্দু ভোটারদের সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে। আমরা দেখেছি ‘শরিয়ত’ নামের আদিম বর্বর আইনের সমর্থনে দীর্ঘ মিছিল। ‘অকাল তখত’ থেকে পুরোহিতদের জারি হওয়া ফতোয়া। আমরা দেখেছি রামশিলা ও বাবরি মসজিদ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আমরা দেখলাম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পুলিশের ভূমিকা হয় নীরব দর্শকের, নতুবা দাঙ্গাবাজদের উৎসাহদাতার। দেখেছি গুজরাটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের মানুষদের লুঠ, ধর্ষণ ও হত্যা হতে। তাই সংখ্যালঘুরা আর পুলিশকে নাগরিকদের রক্ষাকারী হিসেবে ভাবতে পারছেন না। অস্বীকার করার উপায় নেই, শাসকশ্রেণির স্বার্থে পুলিশের ওপর ধর্মীয় কুসংস্কারের প্রভাব বেড়েই চলেছে।

পুলিশ লাইনে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার বানাতে দেওয়ার কোনও
প্রশ্নই নেই। আর আজ স্বাধীনতার প্রায় ষাট বছর পরে