পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
৬৭

 জাদুকর যে মেয়েটিকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখতে চান, তার পোশাকের তলায় থাকে একটা ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি চওড়া ফুট দেড়েকের মতো লম্বা শক্ত ধাতুর পাত। পাতটি প্রয়োজন অনুসারে লম্বা বা এই ধরনের একটু বাঁকানো হতে পারে। চামড়ার বা ক্যানভাসের তিন-চারটে বেল্ট দিয়ে ধাতুর পাতটি শরীরের সঙ্গে বাঁধা থাকে। পাতটিতে প্রয়োজনমতো এক বা একাধিক ফুটো থাকে। যে ডাণ্ডার ওপর নির্ভর করে মেয়েটি শূন্যে ঝুলে থাকে, সেই ডাণ্ডার মাথাটা হয় একটু বিশেষ মাপের। দেখতে হবে ডাণ্ডার মাথাটা যেন মেয়েটির পোশাক সমেত ওই ধাতুর পাতের ফুটোয় শক্ত ও আঁটোসাঁটোভাবে ঢোকে। মেয়েটির যা করণীয়, তা হলো সম্মোহিত হওয়ার অভিনয় ও সরু পাতের ওপর ব্যালান্স রেখে শোয়া।

 ডাণ্ডার ওপর হাত রেখে সাধুরা যেসব পদ্ধতিতে নিজেদের দেহকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখেন, তার কয়েকটা ছবি এখানে দিলাম। শূন্যে ভেসে থাকা বিষয়ে আগেই বিস্তৃত আলোচনা করে নেওয়ায় ছবিগুলো দেখলে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন সাধুদের ভেসে থাকার কৌশলগুলো।

 আলেকজাণ্ডার হাইমবুর্গার (Alexander Heimburghar) নামে এক বিখ্যাত জাদুকর আমেরিকায় ১৮৪৫-৪৬ সাল নাগাদ একটা অদ্ভুত খেলা দেখিয়ে আলোড়নের ঝড় তুলেছিলেন। খেলাটা ছিল জাদুকরের এক সঙ্গী, একটা খাড়া ডাণ্ডার মাথায় শুধুমাত্র একটা হাতের কনুই ঠেকিয়ে শূন্যে ভেসে থাকত।

 আলেকজাণ্ডারের লেখা থেকেই জানা যায়, তিনি এই খেলা দেখানো শুরু করেন ভারত থেকে প্রকাশিত একটি বার্ষিকী পত্রিকায় এক ফকিরের অলৌকিক খেলার বর্ণনা পড়বার পর। ফকিরটি একটি বাঁশের লাঠি মাটিতে খাড়া রেখে লাঠির ওপর হাত ঠেকিয়ে তার এক সঙ্গীকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখত।

 অসাধারণ জাদুকর হ্যারি হুডিনি এক জাদু আলোচনায় বলেন, তিনি এই লাঠিতে ভর দিয়ে শূন্যে ভেসে থাকার খেলাটির কথা প্রথম জানতে পারেন টমাস ফ্রস্ট (Thomas Frost) নামের এক ইংরেজ লেখকের লেখা বই পড়ে। লেখক ১৮৩২ সালে মাদ্রাজের এক ব্রাহ্মণকে শূন্যে বসে থাকতে দেখেন। ঘটনাটা ঘটেছিল এইভাবে, একটা তক্তাজাতীয় কাঠের টুকরোতে চারটে পায়া লাগানো ছিল। তক্তায় ছিল একটা ফুটো। ফুটোটা ছিল এই মাপের, যাতে একটা লাঠি ঢোকালে লাঠিটা শক্ত হয়ে তক্তার সঙ্গে আটকে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে। খাড়া দাঁড়িয়ে থাকা লাঠির সঙ্গে লাগানো থাকত আর একটা ছোট ডাণ্ডা। এটা থাকত মাটির সঙ্গে সমান্তরালভাবে। ছোট ডাণ্ডাটায় বাহু রেখে শুন্যে ভেসে থাকতেন ব্রাহ্মণ।

১৮৪৮ সাল নাগাদ আধুনিক জাদুর জনক রবেয়ার উদ্যাঁও তার
দু’বছরের ছেলে ইউজেনকে এই পদ্ধতিতে শূন্যে ভাসিয়ে