পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৭১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৪
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

শুরু আগেই পৌঁছেছিলাম। ইঁট দিয়ে একটা বড়-সড় যজ্ঞের জায়গা করা হয়েছিল, তাতে সাজানো ছিল অনেক কাঠ। পাশে স্তূপ করা ছিল প্রচুর কাঠ, পাটকাঠি, একধামা বেলপাতা ও একটা ঘিয়ের টিন। একসময় তান্ত্রিক এসে বসলেন। তাঁর সামনে ছিল একটা কানা উঁচু তামার বাটি। বাটিতে কয়েকটা পাটকাঠি রয়েছে। তান্ত্রিক আসনে বসে ‘মা, মা’ বলে বার কয়েক হুঙ্কার ছাড়লেন। তারপর বাটিটার ওপর ডান হাতের আঙুলগুলো নিয়ে আরতি করার ভঙ্গিমায় নাড়তে লাগলেন।

 একসময় অবাক হয়ে দেখলাম, শূন্য তামার বাটিতে রাখা পাটকাঠি দপ করে জ্বলে উঠল। বিস্মিত ভক্তেরা তান্ত্রিকের জয়ধ্বনি করে উঠল। জয়ধ্বনির মধ্যেই তান্ত্রিকবাবাজি ওই জ্বলন্ত পাটকাঠি থেকে যজ্ঞের আগুন জ্বালালেন।

১১ ডিসেম্বর ১৯৮৮ যজ্ঞে আগুন জ্বালাচ্ছেন জ্যোতি মুখার্জি

 সেই দিনের সেই বিস্ময় আজ আর আমার মধ্যে নেই। সেদিনের হিরো আজ আমার চোখে নেহাতই এক প্রবঞ্চক মাত্র। জানি ওই তান্ত্রিকও সেদিন বিজ্ঞানেরই সাহায্য নিয়ে আগুন সৃষ্টি করেছিল। সেদিন তান্ত্রিকের বাটিতে ছিল কিছুটা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট। আর, তান্ত্রিকের ডান হাতের আংটির খাঁজে লুকোনো ছিল গ্লিসারিন ভর্তি ড্রপার। হাত নাড়তে নাড়তে আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন বাটিতে ফেলে দিয়েছিল। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট গ্লিসারিনের সংস্পর্শে এতে তাকে অক্সিডাইজড করে ফেলেছিল। এই অক্সিডেশনের ফিজিক্যাল পরিবর্তন হিসেবে ওই রাসায়নিক উত্তাপ বেড়ে গিয়ে দপ করে আগুন জ্বলে উঠেছিল।