১০০
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
—“আপনার তাে একটিই সন্তান।”
—হ্যাঁ।”
এমনি আরও অনেক কিছুই বলে গিয়েছিলাম, আর প্রতিটির ক্ষেত্রেই উত্তর পেয়েছিলাম, “হ্যাঁ”।
উপস্থিত দর্শকরা ঘটনার নাটকীয়তা দারুণ রকম উপভােগ করেছিলেন। টান-টান উত্তেজনায় তুমুল হাততালি দিয়ে অভিনন্দিত করেছিলেন। দর্শকদের এই বিমূঢ় বিস্ময়ের পেছনে আমারও সেই কৌশলই ছিল, যা ফুলবাবা এবং কামদেবপুরের ফকিরবাবা প্রয়ােগ করে থাকেন।
প্রেস ক্লাবের হলে এসে আমি দুতিনজনকে আমার লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করে নিয়ে দ্রুত তাঁদের সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করেছিলাম ব্যবস্থাপকদের সহায়তায়। তারপর সামান্য জাদু কৌশলের সাহায্যে আমার ইচ্ছে মতাে ব্যক্তিটির নাম তুলতে বাধ্য করেছিলাম। আর তারপরই ঘটিয়ে ফেললাম অসাধারণ অলৌকিক (?) ঘটনা।
বহু বিখ্যাত ও অখ্যাত সাধু-সন্ন্যাসী বা জীবন্ত ভগবানের সম্বন্ধে শুনেছি, তাঁরা অনেক দুরারােগ্য রােগ সারাতে পারেন। এমনকী যে সব ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা আজও আবিষ্কৃত হয়নি, এইসব সাধুজনেরা তাও আরােগ্য করতে সক্ষম। এই সব অবতারেরা যখন কঠিন রােগে আক্রান্ত হন, তখন শােনা যায় ভক্তের কঠিন রােগ গ্রহণ করার জন্যেই নাকি অবতারের এই অবস্থা।
গৌরাঙ্গ ভারতী একটা অদ্ভুত রােগে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। হেঁচকি রােগ। যখন-তখন অনবরত হেঁচকি ওঠে। তিনি নিজেই আমাকে বলেছিলেন, অনেক বড়-বড় ডাক্তার দিয়ে নাকি চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোনও ফল পাননি। জিজ্ঞেস করেছিলাম, “আপনি তাে ভক্তদের যে কোন রােগই সারিয়ে দেন বলে শুনেছি, তবে কেন নিজে ভুগছেন?”
“রামকৃষ্ণ কী নিজের অসুখ সারাতে পারতেন না? তিনি কেন সারালেন না, কারণ একটাই। মা যখন রােগ-ভােগ দিয়েছেন তখন নিশ্চয়ই ভােগ করব। অন্যের হয়ে মায়ের কাছে বলার জন্য ওকালতনামা নিয়েছি। নিজের কিছু চাওয়ার জন্য নয়,” বলেছিলেন গৌরাঙ্গ ভারতী।
ওই ধরনের সুন্দর পাশকাটানাে জবাব যেমন অনেকে দেন তেমনি সাঁইবাবা বা অনুকুলচন্দ্র ঠাকুরের মতাে অনেকের সম্বন্ধেই ভক্তরা দাবি করেন—এঁদের অসুস্থতার কারণ ভক্তের রােগ গ্রহণ। সাঁইবাবার একবার অ্যাপেণ্ডিসাইটিস অপারেশন করা হয়। ভক্তরা অনেকেই বিশ্বাস করেন, এক ভক্তের রােগগ্রস্ত অ্যাপেণ্ডিক্সের সঙ্গে নিজের সুস্থ অ্যাপেণ্ডিক্সের অদল-বদল করে নিয়েছিলেন সাঁইবাবা। হায় অন্ধ বিশ্বাস!