পাতা:অশনি সংকেত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০

অশনি-সংকেত -সে তোমার কাজ নয়। অমন চাঁপা ফুলের কলির মত আঙলি, ঢে"কি পড়ে ছোঁচে যাবে। তার দায়িক আমি হবো বঝি বামন-বো ? --দায়িক হতে হবে না। সেজন্য । আহা, ভঙ্গি দেখো না ! মরণের ভগ্নদশা ! কােপালী-বেী অনঙ্গ-বেয়ের দিকে চোখ মিটকি মারছিল, তার প্রতি লক্ষ্য করেই অনঙ্গবৌয়ের শেষের উন্তিটুকু । হরি কােপালীর ছোট বৌয়ের বয়েস অনঙ্গ অপেক্ষা বছর দই বেঢ়িা হবে, ছেলেপলে হয় নি, রংও ফসী, মাখ-চোখের চটক ও দেহের গড়ন এবং বাঁধনি ভালোই। রাস্তার লোকে চেয়ে দেখে । অনঙ্গ হেসে বললে-আড়াচোখ দেখাগে অন্য জায়গায়-বহলোকের মডু ঘরিয়ে দিতে পারবি । কােপালী-বোঁ হেসে গড়িয়ে পড়ে আবে কি। বললে—মডু ঘরিয়ে বেড়ানো বঝি আমার কাজ ? --কি জানি দিদি ? -আর তুমি বামন-বো।--তুমি যে অনেক মানির মন টলিয়ে দিতে পারো মন করলি ? আমরা তো তোমার পায়ের নখের যাগ্যি নাই । সামনে খোেশামোদ করে বলচি নে বামন-বোঁ । গ্রামের সবাই বলে অনঙ্গ-বেী সলন্দাজ হাসি মাখে বললে-যাঃ- হরি কােপালীর দ’খানা মেটে ঘর, একদিকে পইমাচা, একদিকে বেড়ার মধ্যে লালডাটা ঝিঙে ও বেগনের চাষ। পইমাচার পাশে ছোট চালার নিচে ঢে"কি পাতা। সেখানে জড়ো হয়েচে হার কােপালীর বড়-বেী, আরও পাড়ার দ-তিনটি ঝি-বেী। ঢেকিঘরের চারপাশে বর্ষপটি বনকচুর ঝাড়, ধতিরো গাছ, আদাড় বাগ গাছে রাঙা রাঙা মটর ফল, ঢে"কিঘরের চালে তেলাকুচা লতা উঠে দলচে, বৰ্ষ সজল হাওয়ায় কচি লতাপাতার গন্ধ । অনঙ্গ-বেী আর ছোট-বো। সেখানে পৌছতে সবাই খাব খাঁশি । বড়-বোঁ বললে-এসো বামন-বোঁ, তুমি না এলি চে'কশেলের মজলিশ আমাদের জমে N ক্ষিত্তরী কাপালী বললে—যা বললে দিদি, ঠাকরণ-দিদি আমাদের চে'কশেল আলো করে থাকেন। আমাদের বাকির মধ্যি হা-হ্য করতে থাকে উনি না। এলি অনঙ্গ-বে। হেসে বললে-তোমাদের বন্ড দরদ দেখছি।-- ছোট-বো বললে-আমিও তা বলছিলাম, বামন-বোয়ের রাঙা পায়ের তলায় পড়ে আমি মরতি পারি।-- বড়-বেী বললে-সে তো ভাগ্য-বামনের এয়িস্ত্রী নোয়ের পায়ে মরবার ভাগ্যি চাই রে ছটিকি। সে এমনি হয় না । এদের দাপরের মজলিশ জমে উঠলো। কপিলীপাড়ার বৌ-ঝিয়েদের এই একমাত্র আমোদ-আহমাদের স্থান । এখানে না এলে ওদের দপারটা মিথ্যে হয়ে যায় যেন। পাড়াগাঁয়ের গহস্থঘরের মেয়ে, দােপরে এদের দিবানিদ্রার অভ্যোস নেই, সময়ও পায় না । ধান ভানা চি’ড়ে কোটাতেই অবসর সময় কেটে যায়, ওর মধ্যেই এদের আড্ডা, গল্পগজব যা কিছ । অনঙ্গ-বেী বললে-বড়-বো, ও ধান কাদের ?