নিবেদন
আমার পিতৃদেবের আদেশে ১৯০৫ সালে বুদ্ধচরিত বাংলাভাষায় তর্জমা করিতে প্রবৃত্ত হই। তখন কেবলমাত্র কাওয়েল সাহেবের সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছে। সদ্য আবিষ্কৃত এই কাব্যখানি পড়িয়া তিনি প্রচুর আনন্দ পান এবং আমার সহপাঠী সন্তোষচন্দ্র মজুমদার ও আমাকে তর্জমা করিবার জন্য সেই বইখানি দেন। আমাদের দুইজনের তখন ছাত্রাবস্থা, সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে তখন কাহারো এত অধিকার ছিল না যে সাহস করিয়া এই কাজটি গ্রহণ করি। পিতৃদেবকে নিরুৎসাহিত করিতে ইচ্ছা করিল না— তর্জমা করিতে লাগিয়া গেলাম। প্রথম তিন সর্গ তিনি নিজে সংশোধন করিয়া দিয়াছিলেন। বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের কর্তৃপক্ষ আমার পিতৃদেবের নিকট সন্ধান পাইয়া পরিষৎ-পত্রিকায় সেই সময় এই বঙ্গানুবাদের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করিয়াছিলেন। কিন্তু অনুবাদটি তখন প্রকাশ করার বাধা ঘটিল। অনেকগুলি শব্দের যথার্থ অর্থবোধ করা তখন সম্ভব হয় নাই। বহু বৎসর ধরিয়া অনেক পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতের গবেষণার ফলে, এখন সেগুলি বোধগম্য হইয়াছে। অনুবাদের খাতাগুলি আমার নিকটেই অযত্নে পড়িয়া রহিল।
বিশ্বভারতীর গ্রন্থপ্রকাশসমিতির সম্পাদক শ্রীযুক্ত চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয়ের বিশেষ অনুরোধে সম্প্রতি খাতাগুলির পুনরুদ্ধার করিতে হইল। ইতিমধ্যে নূতন বিপত্তি উপস্থিত। প্রায় চল্লিশ বৎসর চর্চার অভাবে সংস্কৃতজ্ঞান যাহা ছিল তাহা প্রায় বিলুপ্ত। এতকাল ধরিয়া এই কাব্য সম্বন্ধে যে-সব গবেষণা হইয়াছে তাহার অনুধাবন করিবার সময়েরও অভাব। এই বিপদ হইতে আমাকে উদ্ধার করিলেন চীনভবনের অধ্যাপক