পাতা:অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত (প্রথম খণ্ড) - রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৪৫).pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম সর্গ


 তিনি রাজগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হইয়াও সৈন্য রাখিতেন। সতত দানশীল হইয়াও অহংকারী ছিলেন না। অধীশ্বর হইয়াও সর্বদা সমদৃষ্টিসম্পন্ন এবং সৌম্যস্বভাব হইলেও মহাশক্তিশালী ছিলেন ॥১০॥[]

 তাঁহার বাহুদ্বারা অভিহত হইয়া, সমরাঙ্গনে পতিত শত্রুপক্ষীয় গজরাজগণের মস্তক হইতে বহুল পরিমাণ মুক্তা স্খলিত হওয়ায় মনে হইত, যেন ঐ গজসমূহ পুষ্পাঞ্জলির দ্বারা তাঁহাকে ভক্তিভরে প্রণাম করিতেছে ॥১১॥

  1. ইহার আক্ষরিক অনুবাদ: “তিনি ভূভৃদ্ গণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হইয়াও পক্ষযুক্ত ছিলেন, তাঁহার দান নিয়ত প্রবৃত্ত হইলেও তিনি মদযুক্ত ছিলেন না। তিনি ঈশ হইয়াও সমদৃষ্টিসম্পন্ন এবং শান্ত প্রকৃতি হইয়াও মহাপ্রতাপশালী ছিলেন।”
     এই শ্লোকের মধ্যে কতকগুলি দ্ব্যর্থযুক্ত শব্দ আছে; যথা ভূভৃদ্ = পর্বত ও রাজা। পক্ষ = পাখা ও সৈন্য, সহায়। দান = মদ (হস্তীর গণ্ড হইতে ক্ষরিত) ও দান। ঈশ = শিব ও ঐশ্বর্যশালী। সমদৃষ্টি = যুগ্মলোচন, সমদর্শী। প্রতাপ = উত্তাপ ও শক্তি। সেইজন্য ইহার আর এক অর্থ হয়:
     "তিনি পর্বতগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হইয়াও পক্ষধারী ছিলেন। তাঁহার মদ নিয়ত নির্গত হইলেও তিনি মদযুক্ত ছিলেন না। তিনি শিব হইয়াও যুগ্মচক্ষুসম্পন্ন ছিলেন এবং শান্ত প্রকৃতি হইয়াও অত্যন্ত উত্তাপ দান করিতেন।
     এইভাবে অর্থ করিলে বাক্যগুলির অর্থে বিরোধ বা অসংগতি দৃষ্ট হয়। কিন্তু পূর্বোক্তরূপ অর্থ করিলে বিরোধ বা অসংগতি থাকে না। সংস্কৃতে ইহাকে বলে বিরোধাভাস অলংকার।