পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
আখ্যানমঞ্জরী।

যাইতে হইতেছে, এবং হয় ত আর তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ ও মিলন হইবে না, এই শোকে কাতর হইয়া, সে আর্ত্তনাদ, রোদন ও নৌকারোহণে অনিচ্ছাপ্রদর্শন করিতে লাগিল। তদ্দর্শনে মিশনরি মহোদয় স্বীয় ভৃত্যদিগকে এই আদেশ দিলেন, উহারে বলপূর্ব্বক নৌকায় আরোহণ করাও। তদনুসারে তাহারা বলপ্রদর্শনের আরম্ভ করিলে, ঐ স্ত্রীলোক নিতান্ত নিরুপায় ভাবিয়া বাধাদানে বিরত হইল। যদি সে, অতঃপবও নৌকারোহণে অসম্মতি প্রদর্শন করিত, তাহা হইলে, তাহারা নিঃসন্দেহ উহার প্রাণবধ করিয়া, দুই শিশুকে নৌকায় লইয়া যাইত।

 অবশেষে ঐ হতভাগা নারী, শিশুসন্তান সহিত নৌকায় আরোহিত ও মিশনরির আশ্রমে নীত হইল। স্থলপথে গেলে অনায়াসে পথ চিনিতে পারা যায়, সুতরাং সে পলাইয়া পুনরায় আপন আলয়ে যাইতে পারে, এই আশঙ্কায় মিশনরি মহোদয় উহাদিগকে জলপথে লইয়া গেলেন। স্বামী ও অবশিষ্ট সন্তানদিগের অদর্শনে, সেই স্ত্রীলোকের অন্তঃকরণে অতি প্রবল শোকানল প্রজ্বলিত হইতে লাগিল। সে আহারনিদ্রাপরিহার পূর্ব্বক, উন্মত্তার ন্যায় কালক্ষেপ করিতে, এবং মধ্যে মধ্যে দুই সন্তান লইয়া, আপন আবাসের উদ্দেশে পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল, সতর্ক মিশনরিভৃত্যেরাও, প্রতিবারেই তাহাকে ধরিয়া আশ্রমে আনিতে লাগিল।

 অবশেষে, মিশনরি মহাশয় অতিশয় বিরক্ত হইয়া উঠিলেন। তদীয় আদেশক্রমে, তাঁহার ভৃত্যেরা একদিন ঐ স্ত্রীলোককে