পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অপত্যস্নেহের একশেষ।
১১৯

ক্রমে প্রাণধারণ করিতে পারিব না, তাহারাও আমার অদর্শনে শোকাকুল হইআ, নিঃসন্দেহ প্রাণত্যাগ করিবে। অতএব আমি অবশ্য তাহাদের নিকটে যাইব, এবং যেরূপে পারি, খৃষ্টধর্মাবলম্বীদিগের হস্ত হইতে উদ্ধার করিয়া, তাহাদিগকে তাহাদের পিতার নিকটে লইয়া যাইব। তিনি আবাসে আসিয়া আমাদিগকে দেখিতে না পাইয়া, কতই বিলাপ ও কতই পরিতাপ করিতেছেন, আমরা অকস্মাৎ কোথায় গেলাম, কিছুই অনুধাবন করিতে না পারিয়া, ইতস্ততঃ কতই অনুসন্ধান করিতেছেন, এবং কোনও সন্ধান করিতে না পারিয়া, হতবুদ্ধি ও ম্রিয়মাণ হইয়া, যারপরনাই অসুখে ও দুর্ভাবনায় কালহরণ করিতেছেন। পুত্রেরাও, মাতৃশোকে ও ভ্রাতৃশোকে আহার নিদ্রা পরিত্যাগ করিয়াছে, এবং অহোরাত্র হাহাকার করিতেছে।

 সেই স্ত্রীলোকের পলাইবার কোনও আশঙ্কা নাই, এই ভাবিয়া আশ্রমবাসীরা তাহার রক্ষণ বিষয়ে সবিশেষ মনোযোগ রাখে নাই। আর, প্রহার ও দৃঢ় বন্ধন দ্বাবা, তাহার হস্তদ্বয় ক্ষতবিক্ষত হইয়াছিল, এজন্য আশ্রমের পরিচারকেরা, কর্ত্তৃপক্ষের অগোচরে তাহার হস্তের বন্ধন কিঞ্চিৎ শিথিল করিয়া দিয়াছিল। সে পুত্রদিগকে দেখিবার নিমিত্ত নিতান্ত অধীর হইয়া, দন্ত দ্বারা হস্তের বন্ধনচ্ছেদনপূর্ব্বক, গৃহ হইতে বহির্গত হইল, সাধ্য অসাধ্য বিবেচনা না করিয়া, সান্‌ফর্নাণ্ডো উদ্দেশে প্রস্থান করিল, এবং চতুর্থ দিবস প্রত্যুষে সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া, যে কুটীরে তাহার পুত্রদিগকে রুদ্ধ