পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
আখ্যানমঞ্জরী।

 শ্রবণমাত্র, সেই স্ত্রীর ও তাহার পুত্রের অন্তঃকরণে যেরূপ ভাবের উদয় হইতে লাগিল, তাহার বর্ণন করিতে পারা যায় না। তাহারা উভয়েই, সম্রাটের দয়া ও সৌজন্যের একশেষ দর্শনে, মোহিত ও চমৎকৃত হইয়া, কিয়ৎ ক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল, অনন্তর অশ্রুপূর্ণলোচনে, গদগদবচনে, জগদীশ্বরের নিকট তাঁহার অচল রাজ্য ও দীর্ঘ আয়ুর প্রার্থনা করিতে লাগিল। এই অতর্কিত আনুকূল্য লাভ করিয়া, সেই স্ত্রীলোক ত্বরায় রোগমুক্ত হইল, এবং সুখে ও স্বচ্ছন্দে সংসারযাত্রানির্ব্বাহ করিতে লাগিল।

 আর একদিন সম্রাট্ রাজপথে একাকী ভ্রমণ করিতেছেন, এমন সময়ে এক দীন বালিকা সেই পথ দিয়া আপনার বস্ত্র বিক্রয় করিতে যাইতেছে। সে সম্রাটকে চিনিত,না, সুতরাং তাঁহাকে লক্ষ্য না করিয়া, তাঁহার সম্মুখ দিয়া, চলিয়া যাইতে লাগিল। কিন্তু, তিনি তাহার মুখ দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারিলেন, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় পড়িয়াছে। তখন তিনি তাহাকে সদয় সম্ভাষণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, অয়ি বালিকে। কি জন্য তোমায় বিবর্ণ ও বিষণ্ন দেখিতেছি, বল।

 এই সস্নেহবাক্য শ্রবণগোচর করিয়া, বালিকা দণ্ডায়মান হইল, এবং বলিতে লাগিল, মহাশয়, কিছু দিন হইল, আমি পিতৃহীন হইয়াছি, আমাদের এরূপ দুরবস্থা যে, দিনপাত হওয়া কঠিন। আমার জননী অসুস্থ হইয়াছেন, তাঁহার পথ্য ও ঔষধের নিমিত্ত, আর কোনও উপায় দেখিতে না পাইয়া,