পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উৎকট বৈরসাধন।
৩৩

প্রদান করাই তিনি সর্ব্বপ্রথম ও সর্ব্বপ্রধান কর্ম্ম বলিয়া অবধাবিত করিলেন, এবং অনন্যমনা ও অনন্যকর্ম্মা হইয়া, কেবল তদনুকূল উদ্যেগে ব্যাপৃত রহিলেন। সুযোগ পাইয়া, তিনি নগরাধ্যক্ষের আলয় হইতে এক বহুমূল্য স্বর্ণপাত্রের অপহরণ করিলেন, এবং কৌশলক্রমে সেই স্বর্ণপাত্র ঘাতকের আলয়ে সংস্থাপিত করিয়া, অন্য লোক দ্বারা রাজপুরুষদিগের নিকট অপহৃত দ্রব্য অমুক স্থানে আছে, এই সংবাদ দেওয়াইলেন। তাঁহারা ঘাতকের আলয়ে প্রবিষ্ট হইয়া, অপহৃত স্বর্ণপাত্র বহিষ্কৃত করিলেন। সে চৌর্য্যাভিযোগে বিচারালয়ে নীত হইল। তাহার গৃহে অপহৃত বস্তু লক্ষিত হইযাছিল, সুতবাং, সেই অভিযোগ নিঃসংশয়িতরূপে সপ্রমাণ হইল। আরবীয় বিধানশাস্ত্রের ব্যবস্থা সকল অত্যন্ত কঠিন, চৌর্য্যাপরাধ প্রমাণসিদ্ধ হইলে, অপরাধীর প্রাণদণ্ড হয়। তদনুসারে, সেই ঘাতকের প্রাণদণ্ডের ব্যবস্থা হইলে, সে বধস্থানে নীত হইল। সেই নগরে ঐ ব্যক্তি ব্যতিরিক্ত ঘাতকান্তর নিযুক্ত ছিল না। বিদবমন্, স্বয়ং ঘাতককর্ম্মের অনুষ্ঠানে সম্মত হইয়া, তীক্ষধার তরবারি লইয়া, প্রফুল্লচিত্তে বধস্থানে উপস্থিত হইলেন।

 সেই ঘাতকের উপর তাঁহার মর্মান্তিক আক্রোশ জন্মিয়াছিল, এজন্য তিনি, তাহার বধসাধন করিয়াই, বৈরসাধনপ্রবৃত্তি চরিতার্থ হইল, এরূপ বোধ করিলেন না। কেবল তাঁহার চেষ্টায়, বিনা অপরাধে, তাহার প্রাণদণ্ড হইতেছে, ইহা তাহাকে অবগত না করিলে, তাঁহার চিত্তে সন্তোষবোধ হইল না।