পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উৎকট বৈরসাধন।
৩৫

পুরদ্বার রুদ্ধ করিয়া রাখিলে, বিপক্ষের পক্ষে, সেই নগরে প্রবেশ করা, কোনও ক্রমে, সহজ ব্যাপার নহে। সুরঙ্গ প্রস্তুত করিয়া রাখিবার উদ্দেশ্য এই যে, যখন মুসলমানদিগের কোনও বিপক্ষ সেই নগর আক্রমণ করিবে, তাহাদিগকে ঐ সুরঙ্গ দেখাইয়া দিবেন, তাহা হইলে, তাহারা, অনায়াসে নগরে প্রবেশ করিয়া, মুসলমানদিগকে পরাজিত করিতে পারিবে।

 অতঃপর বিদবমন, উৎসুকচিত্তে বিপক্ষের আগমনপ্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। অনতিবিলম্বে, তাঁহার অভিপ্রেতসিদ্ধির সম্পূর্ণ সুযোগ ঘটিয়া উঠিল। কিছু দিন পরেই, ফরাসিসৈন্য সেই নগর আক্রমণ করিল। প্রথম উদ্যমে নগর হস্তগত করিতে অসমর্থ হইয়া, তাহারা শিবির ভঙ্গ করিয়া প্রতিপ্রয়াণের উদ্যোগ করিতেছে, এমন সময়ে বিদবমন, ফরাসিসেনাপতির নিকটে গিয়া, সবিশেষ সমস্ত বলিয়া, সেই উদ্যোগের নিবারণ করিলেন। সেনাপতি, অভিপ্রেতসমাধানের ঈদৃশ অসম্ভাবিত সদুপায়লাভে, যৎপরোনাস্তি প্রীতিপ্রাপ্ত হইলেন, এবং অবিলম্বে, বিদবমনের সমভিব্যাহারে, কতিপয় অকুতোভয অসংসাহসিক সৈনিক-পুরুষ প্রেরিত করিলেন। তাহাবা সেই সুরঙ্গ দ্বারা নগরে প্রবিষ্ট হইয়া, পুরদ্বার উদ্ঘাটিত করিলে, সমুদয় ফরাসিসৈন্য, অতর্কিতরূপে, উচ্ছলিত অর্ণবপ্রবাহেব ন্যায়, নগরে প্রবেশ করিল। অনধিক সময়ের মধ্যেই নগরস্থ সমস্ত মুসলমান তদীয় তরবারি-প্রহারে ছিন্নমস্তক ও ভূতলশায়ী হইল।