পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পতিব্রতা কামিনী।
৩৯

সবিশেষ অনুরোধে, আমার প্রাণদণ্ড রহিত হইয়া, যাবজ্জীবন এই স্থানে রুদ্ধ থাকিয়া, কর্ম্ম করিবার আদেশ হইয়াছে।

 এইরূপে, আলবর্টি আমার নিকট স্বীয় অবস্থার বর্ণন করিতেছেন, এমন সময়ে সেই স্থলে এক স্ত্রীলোক উপস্থিত হইলেন। তাঁহার আকার প্রকার দেখিবামাত্র, আমার স্পষ্ট বোধ হইল, ইনি সামান্য নারী নহেন, অবশ্যই কোনও সম্ভ্রান্ত লোকের কন্যা হইবেন। তাদৃশ ভয়ঙ্কর স্থানে থাকাতে ও দুঃসহ ক্লেশ ভোগ করাতেও, তাঁহাব অসামান্য রূপলাবণ্য এক কালে লয়প্রাপ্ত হয় নাই, তখনও তাঁহার রূপে বিলক্ষণ মাধুরী ও মোহনী শক্তি ছিল। ফলতঃ, তিনি জর্ম্মনির এক অতি সম্ভ্রান্ত কুলের কন্যা, কৌণ্ট আল্‌বর্টির সহধর্ম্মিণী। তিনি অত্যন্ত পতিপরায়ণা, যাহাতে পতির অপরাধ-মার্জ্জনা হয়, প্রাণপণে তাহার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। অবশেষে, অন্য কোনও উপায় না দেখিয়া, তদীয় বিরহে প্রাণধারণ করা অসাধ্য ভাবিয়া, সমদুঃখভাগিনী হইবার নিমিত্ত, তাঁহার সহিত এই ভয়ঙ্কর স্থানে আসিয়া রহিয়াছেন। তিনি, তাঁহার সহবাসে, সন্তুষ্ট চিত্তে, কালহরণ করিতেছেন, তাহার সহিত আকরে কর্ম্ম করিতেছেন। পূর্ব্বতন সুখসৌভাগ্যের অবস্থা, একক্ষণের জন্যও, তাঁহার মনে উদিত হয় না। এরূপ স্ত্রীলোককেই পতিব্রতা কামিনী বলে। আমি, ইঁহার আচরণ দর্শনে, মোহিত ও চমৎকৃত হইযাছি।

 এই আকরের অনতিদূরে এক ক্ষুদ্র গ্রাম আছে। কতিপয়