পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
আখ্যানমঞ্জরী।

ক্ষণ পরে, অপর হস্ত দ্বারা পিনেসের ক্ষেপণী অবলম্বন করিলেন। তখন পোতবাহ পূর্ব্ববৎ তাঁহার ঐ হস্তের ছেদন করিল। তিনি পুনরায় অর্ণবপ্রবাহে পতিত হইলেন, কিন্তু তখনও জলমগ্ন না হইয়া, শোণিতোদ্গারী দুই ছিন্ন হস্ত ঊর্দ্ধে তুলিয়া, পোতের সন্নিহিত স্থানে সন্তরণ করিতে লাগিলেন।

 সেই যুবকের ভ্রাতৃস্নেহেব একশেষ দর্শনে, সকলের হৃদয় দ্রবীভূত হইয়াছিল, এক্ষণে তাঁহার এই অবস্থা নয়নগোচর করিয়া, সকলেরই অন্তঃকরণে যারপরনাই করুণার উদয় হইল। তাঁহারা সকলেই অশ্রুবিসৰ্জ্জন করিতে লাগিলেন, এবং কিয়ৎক্ষণ পরে একবাক্য হইয়া বলিলেন, আমাদের ভাগ্যে যাহা থাকে তাহাই ঘটিবে, আমরা অবশ্যই উহার প্রাণরক্ষা করি। জন্মাবচ্ছিন্নে কেহ কখনও ভ্রাতৃস্নেহের এরূপ দৃষ্টান্ত দৃষ্টিগোচর করি নাই। এই বলিয়া, তাঁহারা তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে পিনেসে উঠাইয়া লইলেন, এবং কথঞ্চিৎ তদীয় হস্তের শিরাবন্ধন করিয়া, শোণিতস্রাব স্থগিত করিলেন।

 পিনেসের লোকেরা, সে দিবস অবিশ্রামে দাঁড় বাহিতে লাগিলেন। পরদিন প্রভাত হইবামাত্র, তাঁহারা অনতিদূরে স্থল দেখিতে পাইলেন। তদ্দর্শনে সকলেরই অন্তঃকরণে সাহস ও উৎসাহের সঞ্চার হইল। তখন তাঁহারা, সেই দিক্ লক্ষ্য করিয়া, বিলক্ষণ বলসহকারে ক্ষেপণীক্ষেপণ করিতে লাগিলেন। কিঞ্চিৎ কাল পরে, পিনেস আফ্রিকার অন্তর্বর্ত্তী মোজাম্বিক্ পর্ব্বতের সন্নিহিত হইলে, তাঁহারা জগদীশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া, বাষ্পবারি-