পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
আখ্যানমঞ্জরী।

 সমুদ্রের তীরবর্তী এক পর্ব্বতের উপর দিয়া যে পথ প্রস্তুত হইতেছিল, তাহারা উভয়ে একদিন ঐ পথে কর্ম্ম করিতেছে, এমন সময়ে এণ্টোনিয়, সহসা কর্ম্ম হইতে বিরত হইয়া সমুদ্রে দৃষ্টিনিক্ষেপপূর্ব্বক, দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া স্বীয় সহচরকে বলিল, এই অর্ণবের অপর পারে আমার যাবতীয় অভিলষিত পদার্থ আছে, প্রতিক্ষণেই আমার বোধ হয়। যেন আমি এক একবার দেখিতে পাইতেছি, আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা সমুদ্রের তীরে আসিয়া, একদৃষ্টিতে এই দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, এবং আমার মৃত্যু হইয়াছে ভাবিয়া, অবিশ্রান্ত অশ্রুপাত করিতেছে, আমার ইচ্ছা হয়, সন্তরণ দ্বারা এই জলরাশি অতিক্রম করিয়া, তাহাদের নিকটে যাই। ফলতঃ সেই দিন অবধি এণ্টোনিয় যখন যখন সেই স্থলে কর্ম্ম করিতে যাইত, সমুদ্রে দৃষ্টিপাত করিবামাত্র তাহার অন্তঃকরণে ঐরূপ ভাবের আবির্ভাব হইত।

 একদিন, কর্ম্ম করিতে করিতে এণ্টোনিয় উর্দ্ধশ্বাসে দৌডিয়া গিয়া রজর্‌কে বলিল, সখে, বোধ হয় এতদিনের পর আমাদের দুঃখের অবসান হইল। রজর্ বলিল, কিরূপে? এণ্টোনিয় বলিল, ঐ দেখ, একখান জাহাজ নঙ্গর করিয়া রহিয়াছে, উহা এখান হইতে দুই তিন ক্রোশের অধিক নহে। এস, আমরা এই পর্ব্বতের উপরিভাগ হইতে ঝাঁপ দিয়া সমুদ্রে পড়ি, এবং সাঁতারিয়া গিয়া ঐ জাহাজে উঠি। যদি এই চেষ্টায় কৃতকার্য্য না হইয়া প্রাণত্যাগ করিতে হয়, তাহা, এরূপে দাসত্ব করা অপেক্ষা সহ গুণে শ্রেয়স্কর।