পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আখ্যানমঞ্জরী

ঝম্প প্রদান করিল, এবং দ্রুত বেগে হাঙ্গরের দিকে গমন করিয়া, উহার উদরে তরবারি প্রবেশ করাইয়া দিল। তখন হাঙ্গর, কুপিত হইয়া, তাহাকে আক্রমণ করিতে উদ্যত হইল। কিন্তু সে, সন্তরণকৌশলে উহার আক্রমণ অতিক্রম করিয়া, উহাকে উপর্য্যূপরি আঘাত করিতে লাগিল।

 এই অবকাশে, জাহাজের উপরিস্থ লোকেরা কতিপয় রজ্জু নিক্ষেপ করিল। পিতা পুত্র এক এক রজ্জু অবলম্বন করিল, তাহারা টানিয়া উহাদিগকে জল হইতে কিঞ্চিৎ ঊর্দ্ধে উঠাইল। এই সময়ে সকলে, উহাদের প্রাণরক্ষা হইল ভাবিয়া, আনন্দধ্বনি করিতে লাগিল। কিন্তু সেই দুর্দান্ত জন্তু মুখব্যাদান ও ঊর্দ্ধে লম্ফ প্রদানপূর্ব্বক, বেকনরের পুত্রের কটিদেশ পর্য্যন্ত গ্রাস করিল, এবং তৎক্ষণাৎ তীক্ষ্ণ দন্ত দ্বারা গ্রস্ত অংশ ছেদন করিয়া লইয়া, জলে পতিত হইল। বালকের কলেবরের অর্দ্ধ অংশ মাত্র রজ্জুতে ঝুলিতে লাগিল।

 এই হৃদয়বিদারণ ভয়ঙ্কর ব্যাপার দর্শনে, ব্যক্তি মাত্রেই, হতবুদ্ধি ও জড়প্রায় হইয়া, কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান রহিল, অনন্তর সকলেই, শোকে বিকলচিত্ত হইয়া, হাহাকার করিতে লাগিল। বেকনর, জাহাজে উত্তোলিত হইয়া, পুত্রের তাদৃশী দশা দেখিয়া শোকে নিতান্ত বিহ্বল হইল। পার্শ্ববর্ত্তী লোকেরা বলপূর্ব্বক ধরিয়া না রাখিলে, সে নিঃসন্দেহ, সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়া, প্রাণত্যাগ করিত। তাহার পুত্র যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিত ছিল, একদৃষ্টে পিতাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। আমার প্রাণ যাউক, কিন্তু, পিতার প্রাণ রক্ষা করিয়াছি, এই আনন্দ অনুভব করিতে