পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
আখ্যানমঞ্জরী।

সামান্য নিকৃষ্ট কর্ম্মের ভার ছিল। সে, এক দিন, গৃহস্বামিনীর বাসগৃহ পরিষ্কার করিতেছে, এবং গৃহমধ্যে সজ্জিত মনোহর দ্রব্য সকল অবলোকন করিয়া, আহ্লাদে পুলকিত হইতেছে। তৎকালে সে গৃহে অন্য কোনও ব্যক্তি ছিল না, এজন্য সে নির্ভয়ে এক একটি দ্রব্য হস্তে লইয়া, কিয়ৎক্ষণ নিরীক্ষণ করিয়া, পুনরায় যথাস্থানে রাখিয়া দিতেছে।

 গৃহস্বামিনীর একটি সোনার ঘড়ী ছিল, সেটি অতি মনোহর, উত্তম স্বর্ণে নির্ম্মিত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরকখণ্ডে অলঙ্কৃত। বালক, ঘড়ীটি হস্তে লইয়া উহার অসাধারণ সৌন্দর্য্য ও ঔজ্জ্বল্য দর্শনে মোহিত হইল, এবং বলিতে লাগিল, যদি আমার এরূপ একটি ঘড়ী থাকিত, তাহা হইলে কি আহলাদের বিষয় হইত। ক্রমে ক্রমে তাহার মনে প্রবল লোভ জন্মিলে, সে ঘড়ীটি অপহরণ করিবার নিমিত্ত ইচ্ছুক হইল।

 কিয়ৎক্ষণ পরে, বালক সহসা চকিত হইয়া উঠিল, এবং কহিতে লাগিল, যদি আমি, লোভ সংবরণ করিতে না পারিয়া এই ঘড়ী লই, তাহা হইলে চোর হইলাম। এখন কেহ গৃহমধ্যে নাই, সুতরাং আমি চুরি করিলাম বলিয়া কেহ জানিতে পারিবে না, কিন্তু যদি দৈবাৎ চোর বলিয়া ধরা পড়ি, তাহা হইলে আমার দুর্দ্দশার সীমা থাকিবে না। সর্ব্বদা দেখিতে পাই, চোরেরা রাজদণ্ডে যৎপরোনাস্তি শাস্তি ভোগ করিয়া থাকে। আর যদিই আমি চুরি করিয়া মানুষের হাত এড়াইতে পারি, ঈশ্বরের নিকট কখনও পরিত্রাণ পাইতে পারিব না। জননীর নিকট অনেক বার শুনিয়াছি, আমরা তাহাকে দেখিতে পাই