পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লোভসংবরণ।
১৩

না বটে, কিন্তু তিনি সর্ব্বদা সর্ব্বত্র বিদ্যমান রহিয়াছেন, এবং আমরা যখন যাহা করি, সমুদয় প্রত্যক্ষ করিতেছেন।

 এই বলিতে বলিতে, তাহার মুখ ম্লান ও সর্ব্বশরীর কম্পিত হইয়া উঠিল। তখন সে ঘড়ীটি যথাস্থানে স্থাপিত করিয়া, কহিতে লাগিল, লোভ করা বড় দোষ, লোকে, লোভ সংবরণ করিতে না পারিলেই, চোর হয়, আমি আর কখনও কোনও বস্তুতে লোভ করিব না, এবং লোভের বশীভূত হইয়া, চোর হইব না, চোর হইয়া ধনবান্ হওয়া অপেক্ষা, ধর্ম্মপথে থাকিয়া নির্ধন হওয়া ভাল। তাহাতে চির কাল নির্ভয়ে ও মনের সুখে থাকা যায়। চুরি করিতে উদ্যত হইয়া, আমার মনে এত ক্লেশ হইল, চুরি করিলে, না জানি আমি কতই ক্লেশ পাইতাম। এই বলিয়া, সেই সুবোধ, সচ্চরিত্র দরিদ্র বালক পুনরায় গৃহ মার্জ্জনে প্রবৃত্ত হইল।

 গৃহস্বামিনী সেই সময়ে পার্শ্ববর্ত্তী গৃহে উপবিষ্টা থাকিয়া, বালকের সমস্ত কথা শুনিতে পাইয়াছিলেন। তিনি তাহাকে তৎক্ষণাৎ এক পরিচারিকা দ্বারা আপন সম্মুখে আনাইয়া, জিজ্ঞাসা করিলেন, অহে বালক। তুমি কি জন্য আমার ঘড়ীটি লইলে না? বালক, শুনিবা মাত্র স্তব্ধ ও হতবুদ্ধি হইয়া গেল, কোনও উত্তর দিতে পারিল না, কেবল, জানু পাতিয়া, কৃতাঞ্জলি হইয়া, বিষণ্ণ বদনে, কাতর নয়নে গৃহস্বামিনীর মুখ নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। ভয়ে তাহার সর্ব্বশরীর কাঁপিতে ও নয়ন হইতে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল।

 তাহাকে এইরূপ কাতর দেখিয়া, গৃহস্বামিনী স্নেহবাক্যে