পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
আখ্যানমঞ্জরী।

সূপ, রুটী ও জল মাত্র আহার করিতে লাগিল। অধ্যক্ষ শুনিয়া অত্যন্ত কুপিত হইলেন, এবং তৎক্ষণাৎ তাহাকে আপন নিকটে আনাইয়া, ভর্ৎসনা করিয়া কহিলেন, তুমি অন্যান্য সকল বিষয়ে সুবোধ বটে, কিন্তু এ বিষয়ে তোমায় অত্যন্ত অবাধ্য দেখিতেছি, সে দিন সাবধান করিয়া দিয়াছি, তথাপি তুমি বিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করিতেছ। যদি স্বেচ্ছা অনুসারে চলা তোমার অভিপ্রেত হয়, তাহা হইলে, তোমায় বিদ্যালয় হইতে বহিষ্কৃত হইতে হইবে।

 এই ভয় প্রদর্শন করাতে, বালক অত্যন্ত ব্যাকুল ও বিষণ্ণ হইল, এবং কৃতাঞ্জলি হইয়া, অশ্রুপূর্ণ লোচনে, কাতর বচনে কহিল, মহাশয়। আমায় ক্ষমা করুন, আমি ইচ্ছা পূর্ব্বক বিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন, বা আপনার উপদেশে অবহেলা করি নাই। যে কারণে উপাদেয় বস্তু ভক্ষণে বিরত থাকি, তাহা আপনার গোচর করিতেছি। আমার পিতা যার পর নাই নিঃস্ব, অতি কষ্টে আমাদের দিনপাত হয়। যখন বাটীতে ছিলাম, জঘন্য পোড়া রুটী মাত্র খাইতে পাইতাম, তাহাও পর্য্যাপ্ত পরিমাণে নহে, এক দিনও আহার করিয়া পেট ভরিত না। এখানে আমি প্রতিদিন উত্তম সূপ ও উত্তম রুটী পেট ভরিয়া খাইতেছি, এখানে আসিবার পূর্ব্বে, আমি কখনও এরূপ উত্তম ও প্রচুর আহার পাই নাই। আমার পিতা মাতা, প্রায় প্রতিদিন, এক প্রকার উপবাসী থাকেন। আহার করিতে বলিলেই, তাঁহাদিগকে মনে পড়ে, তাঁহাদের আহারের কষ্ট মনে করিয়া, উপাদেয় বস্তু ভক্ষণে আমার প্রবৃত্তি হয় না।