পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
আখ্যানমঞ্জরী।

হইয়াছ, এবং বিবাহের সম্বন্ধও ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। যদি তোমার আপত্তি না থাকে, আমি তোমার পাণিগ্রহণে প্রস্তুত আছি। সুজেট্‌ শুনিয়া, সঙ্কুচিত হইয়া কহিল, মহাশয়। আপনি বড় লোক, আমি অতি দীন, আপনি আমায় বিবাহ করিবেন, ইহা কখনও সম্ভব নহে। আপনি পরিহাস করিতেছেন, আমার এই শোকের ও দুঃখের সময়, এরূপে পরিহাস করা উচিত নয়।

 এই কথা শুনিয়া, সেই যুবক কহিলেন, অয়ি সুশীলে। ধর্ম্মপ্রমাণ কহিতেছি, তোমায় পরিহাস করিতেছি না, আমি এত নির্ব্বোধ, নিষ্ঠুর ও অধম নহি যে, তোমার মত গুণবতী মহিলার শোকে ও দুঃখে দুঃখিত না হইয়া, পরিহাস করিব, তুমি এক মুহূর্ত্তের জন্যও সে আশঙ্কা করিও না। তুমি জান, আমার বিবাহ হয় নাই, এক্ষণে আমার বিবাহ করা স্থির হইয়াছে, বিবাহ করিতে হইলে, তোমার মত সর্ব্বগুণসম্পন্না কামিনী কোথায় পাইব?

 এই সকল কথা শুনিয়া, সুজেট্‌ কহিল, না মহাশয়। আপনি যাহা কহিলেন, ইহা শুনিয়া আর আমি পরিহাস বোধ করিতেছি না। আপনি আমায় বিবাহ করিলে, আমার সৌভাগ্যের বিষয়, সন্দেহ নাই। কিন্তু সকল লোকে আপনাকে অবজ্ঞা ও উপহাস করিবে, আপনার পক্ষে আমায় বিবাহ করা পরামর্শসিদ্ধ নহে। তখন, তিনি হাস্যমুখে কহিলেন, যদি কেবল এই তোমার আপত্তি হয়, সে জন্য ভাবনা করিতে হইবে না। এক্ষণে উঠ, আর এখানে কাল হরণ করিবার প্রয়োজন নাই, আমার জননী তোমার অপেক্ষায় বসিয়া রহিয়াছেন।