পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরের প্রাণরক্ষার্থে প্রাণদান।
৪৫

পাছে বিপদে পড়ি, এই ভয়ে আমি, তাহাতে ক্ষান্ত হইয়া, আপন আবাসে নিশ্চিন্তে বসিয়া থাকিব, সাধ্যানুসারে আপনার সাহায্য করিব না, ইহা কখনই হইবে না। আপনি কহিতেছেন, আপনি আমার আলয়ে গেলে, আমারও প্রাণনাশের সম্ভাবনা আছে, কিন্তু বিপদের সময়ে যদি বন্ধুর সাহায্য করিতে না পারি, তাহা হইলে প্রাণ থাকিবার কোনও প্রয়োজন দেখিতেছি না।

 অবশেষে এটিয়ন পেসকের যত্ন ও বিনয়ের বশীভূত হইয়া নিতান্ত অনিচ্ছাপূর্ব্বক তাঁহার আলয়ে গমন করিলেন। যাহাতে তিনি সেখানে লুকাইয়া আছেন বলিয়া, কেহ জানিতে না পারে, পেসক, অশেষ প্রকারে, সেইরূপ যত্ন ও কৌশল করিতে লাগিলেন। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই, এই বিষয় প্রকাশ হইয়া পড়িল। এটিয়নের প্রাণদণ্ড হইল। পেসক তাঁহাকে আশ্রয় দিয়াছিলেন, এই অপরাধে, তিনিও অবিলম্বে তাঁহার অনুগামিনী হইলেন।

 যৎকালে, এই দয়াশীল স্ত্রীলোক ধৃত ও রাজপুরুষদিগের সম্মুখে নীত হইয়াছিলেন, তিনি, কিছু মাত্র ভীত বা দুঃখিত হন নাই, তাঁহার আকারে বা কথোপকথনে ভয় বা দুঃখের কোনও লক্ষণ লক্ষিত হয় নাই। প্রাণদণ্ডের আদেশ হইলে, তিনি অকুতোভয়ে তাহাতে সম্মত হইলেন, তাঁহার দয়া, সৌজন্য ও অকুতোভয়তা দর্শনে ব্যক্তি মাত্রেই মুগ্ধ ও বিস্ময়াপন্ন হইয়াছিল।