পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভ্রাতৃবৎসলতা।
৪৭

 তদনুসারে, দূত পুনরায় তাহার নিকটে গিয়া কহিল, স্ত্রীলোকের ভ্রাতা অপেক্ষা স্বামী অধিক প্রিয়, ও সন্তান অধিক স্নেহপাত্র, ইহাই সর্ব্বদা সর্ব্বত্র লক্ষিত হইয়া থাকে, কিন্তু তোমার আচরণে তাহার সম্পূর্ণ বৈপরীত্য লক্ষিত হইতেছে, তুমি, স্বামী ও সন্তান পরিত্যাগ করিয়া, কি কারণে ভ্রাতার প্রাণরক্ষা প্রার্থনা করিতেছ, রাজা তাহা সবিশেষ জানিতে চাহেন।

 তখন সেই স্ত্রীলোক কহিল, আপনি রাজাকে বলিবেন, যদি তিনি আমার স্বামীর প্রাণদণ্ড করেন, ইচ্ছা করিলে, আমি পুনরায় স্বামী পাইতে পারিব, যদি তিনি আমার সন্তানদিগের প্রাণদণ্ড করেন, পুনরায় আমার সন্তান লাভ অসম্ভব নহে। কিন্তু আমার ভ্রাতার প্রাণদণ্ড করিলে, আমি আর ভ্রাতা পাইতে পারিব না, কারণ, আমার পিতা মাতা উভয়েরই মৃত্যু হইয়াছে। এই সমস্ত আলোচনা করিয়া, আমি ভ্রাতার প্রাণরক্ষা প্রার্থনা করিয়াছি, এক্ষণে, তাঁহার যেরূপ অভিরুচি হয়।

 দূত, রাজসমীপে উপস্থিত হইয়া, এই সমস্ত নিবেদন করিলে, তিনি, সেই স্ত্রীলোকের উপর যৎপরোনাস্তি প্রীত হইলেন, তাহার প্রার্থনা অনুসারে তদীয় ভ্রাতার প্রাণরক্ষার আদেশ দিলেন এবং তাহার সদ্বিবেচনার পুরস্কারস্বরূপ, তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্রেরও অপরাধ মার্জ্জনা করিলেন।