পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
আখ্যানমঞ্জরী।

কিন্তু বৃদ্ধা কহিল, হাঁ মহাশয়। আমার আর এক প্রতিবেশী আছে, সে অত্যন্ত দুঃখী ও অত্যন্ত সৎস্বভাব। ডিউক কহিলেন, অয়ি বৃদ্ধে। আমি এ পর্য্যন্ত তোমার তুল্য নিঃস্পৃহ ও সাধুশীল স্ত্রীলোক দেখি নাই। যদি তুমি বিরক্ত না হও, আমি তোমার নিজের অবস্থা সবিশেষ জানিবার অভিলাষ করি। তখন বৃদ্ধা কহিল, আমি নিতান্ত দুঃখিনী নহি, কাহারও কিছু ধারি না, তদ্ভিন্ন, আমার পনর টাকা সংস্থান আছে।

 এই কথা শ্রবণ করিয়া, ডিউক অতিশয় প্রীত ও চমৎকৃত হইলেন, এবং মনে মনে তাহার সুশীলতা ও নিঃস্পৃহতার অশেষবিধ প্রশংসা করিয়া কহিলেন, তোমার যাহা সংস্থান আছে, যদি আমি তাহার কিছু বৃদ্ধি করিয়া দি, বোধ করি, তাহাতে আপত্তি হইতে পারে না। বৃদ্ধা কহিল, আপনি যাহা আজ্ঞা করিতেছেন, তাহাতে আমার সবিশেষ আপত্তি নাই, কিন্তু আপনি আমায় যাহা সাহায্য করিতে চাহিতেছেন, তাহা আমার যত আবশ্যক, অনেকের তদপেক্ষা অনেক অধিক আবশ্যক, যদি আমি উহা লই, তাহাদিগকে বঞ্চনা করা হয়, আমার বিবেচনায় ওরূপ লওয়া গর্হিত কর্ম্ম।

 বৃদ্ধার ঈদৃশ উদারচিত্ততা দেখিয়া, মহানুভব ডিউক মহোদয় যৎপরোনাস্তি প্রীত হইলেন, এবং তৎক্ষণাৎ পাঁচটি স্বর্ণমুদ্রা বহিষ্কৃত করিয়া, তদীয় হস্তে প্রদান পূর্ব্বক কহিলেন, তোমায় অবশ্য ইহা গ্রহণ করিতে হইবে, যদি না কর, আমি যার পর নাই ক্ষুব্ধ হইব। বৃদ্ধা, তদীয় দয়ালুতা ও বদান্যতার একশেষ দর্শনে, মোহিত ও চমৎকৃত হইয়া, কিয়ৎক্ষণ স্তব্ধ হইয়া