পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
আখ্যানমঞ্জরী।

 এই রূপে কতিপয় দিবস অতীত হইলে, কারাধ্যক্ষ বিবেচনা করিতে লাগিলেন, কই কন্যা অদ্যাপি ইহার জননীকে দেখিতে আইসে, ইহার তাৎপর্য কি, সে অনাহারে কখনই এত দিন বাঁচিতে পারে না, কিন্তু তাহার মৃত্যু হইলেই বা, এ প্রত্যহ তাহাকে দেখিতে আসিবে কেন। যাহা হউক, ইহার তথ্যানুসন্ধান করিতে হইল। এই বলিয়া, তিনি, সে কোনও প্রকার আহার পায় কি না, ইহার পুঙ্খানুপুঙ্খ সন্ধান করিলেন - কিন্তু তাহার আহার প্রাপ্তির কোনও সম্ভাবনা দেখিতে পাইলেন না। তখন, এই কন্যা, বোধ হয়, স্বীয় জননীর নিমিত্ত, কোনও প্রকার আহার লইয়া যায়, এইরূপ সন্দিহান হইয়া, তিনি স্থির করিয়া রাখিলেন, অদ্য যে সময়ে সে আপন জননীর নিকটে যাইবে, প্রচ্ছন্ন ভাবে অবস্থিত হইয়া, সমুদয় প্রত্যক্ষ ও পরীক্ষা করিব।

 নির্দ্ধারিত সময় উপস্থিত হইল। কন্যা যথানিয়মে কারাধ্যক্ষের অনুমতি লইয়া, জননী-সন্নিধানে গমন করিল। কিঞ্চিৎ পরে, কারাধ্যক্ষ প্রচ্ছন্ন ভাবে অবস্থিত হইয়া, অবলোকন করিলেন, কন্যা জননীকে স্তন্য পান করাইতেছে। তিনি তদীয় মাতৃস্নেহের এইরূপ ঐকান্তিকতা দর্শনে, অতিশয় চমৎকৃত হইয়া, মনে মনে তাহাকে শত শত সাধুবাদ প্রদান করিলেন এবং কারাবরুদ্ধা কামিনী, কিরূপে, অনাহারে, এত দিন, প্রাণ ধারণ করিয়া আছে, তাহা বিলক্ষণ বুঝিতে পারিলেন। অনন্তর তিনি এই অদৃষ্টচর অশ্রুতপূর্ব্ব ঘটনার সমস্ত বিবরণ বিচারকর্ত্তাদিগের গোচর করিলে, তাঁহারা কন্যার মাতৃভক্তি ও বুদ্ধি