পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্নসমস্যা
৮১

পোহালে কোন কাজই হয় না। কাজ আরম্ভ করবে, আর ‘আপ্‌সে অবাধে সহজে সিদ্ধিলাভ হবে, এসব মূর্খের সুখস্বপ্নমাত্র। হতাশ হওয়া একেবারেই ঠিক নয়। তোমরা হতাশ হ’য়ো না—তা হলেই লোক্‌সান যাকে বল্‌ছ তার মধ্যে লাভ দেখ্‌তে পাবে। পাঁচবার ধাক্কা খেয়ে তবেই শিক্ষালাভ হয়। আবার আমরা যদি একবার শুনি অমুক ব্যবসায়ে অমুক খুব লাভবান্ হয়েছে অমনি যে যেখানে আছি সকলেই ছুট্‌ দি সেইদিকে।—যেন সেই ব্যবসাটা না কর্‌লে, আর লাভ হবে না। আবার অনেকে এক জায়গায় কিছুদিন কাজ শিখে বলেন ভাল লাগে না—অম্‌নি আর একটা ধর্‌তে যান। এমনি ক’রে এটা নয় ওটা কর্‌তে কর্‌তে শেষে বাঁধা পড়্‌তে হয় সেই চাক্‌রীর খোঁটায়। তাই বলি বিবেচনা ক’রে একটা দিক ঠিক ক’রে ধর, আর সেইখানেই লেগে থাক। অনেক অসুবিধা হবে, অনেক আশাভঙ্গ হবে! কিন্তু আন্তরিক চেষ্টার ফলে শেষে সব শ্রম সার্থক হয়ে উঠ্‌বে।

 শিক্ষানবীশির কথা অনেক বারই বলেছি। আর একটা কথা সেই সঙ্গে বল্‌তে চাই—সেটা হচ্ছে শ্রমের মর্য্যাদা। এই জ্ঞানটা আমাদের বড় কম। ‘পরিশ্রম কর্‌লেই ছোটলোক হল’ এরূপ একটা ধারণা আমাদের হৃদয়ে বদ্ধমূল হয়ে আছে। আমি সেই যুবকটিকে ধন্যবাদ দিই যিনি বলেন কুলীগিরি কর্‌ব;—এঁর বাহাদুরী আছে। ‘ব’সে খাব বা কারও স্কন্ধে চেপে খাব,’ এ বড় লজ্জার কথা—বড় জঘন্য কথা! এরূপ লোককে কিছু কর্‌তে বল্‌লে রাগ কর্‌বেন, কারণ কাজ কর্‌তে হ’লে এঁদের মানের লাঘব হয়। কিন্তু ‘ব’সে খাব’—এই চিন্তার স্থানে ‘ক’রে খাব’—এই চিন্তাই ভাল। য়ুরোপ শ্রমের মর্য্যাদা বোঝে। বাইবেলে আছে—“you shall not eat except by the sweat of your brow” মাথার ঘাম পায় ফেলে যে পরিশ্রম