পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

করে ভোগে অধিকার তারই আছে। যে অলস যে পরভাগ্যোপজীবী—তার বেঁচে থাক্‌বার অর্থ নেই। যে কেউ সৎপথে থেকে আপন পরিশ্রমে আপনি উপার্জ্জন করে সেই আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র—সে ছোটলোক নয়—ভদ্রশ্রেষ্ঠ—এই কথা আমাদের মনে রাখ্‌তেই হবে।

 আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে টাকার অভাব তত নয় যত উপযুক্ত মানুষের অভাব। কোনো সভাসমিতিতে ভলাণ্টীয়ারের অভাব হয় না—কিন্তু যথার্থ কষ্টস্বীকার ক’রে যেখানে কাজ কর্‌তে হয় সেইখানেই আমরা লোকাভাব দেখি। আমাদের উৎসাহ খড়ের আগুনের মত দপ্ ক’রে জ্বলে ওঠে, কিন্তু আবার খপ্ ক’রে নিভে যায়। এরূপ ভাবোচ্ছ্বাস কর্ম্মপঙ্গুত্ব আনয়ন করে। স্বদেশীর সময় গোলদীঘির ধারে অনেক ভাবোচ্ছ্বাস হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসার কার্য্যে শিক্ষানবীশি চাই, অক্লান্ত চেষ্টা চাই—ভাবোচ্ছ্বাস কি ব্যবসা-বাণিজ্যের ভিত্তি হতে পারে? ভাবপ্রবণ হও, খুব বড় কল্পনা কর, ভাবুকতার বলে গতানুগতিকের গণ্ডী ভেঙে ফেল, নূতন পথে এগিয়ে চল, কিন্তু দেখো পঙ্গু ভাবুক হয়ো না;—ভাবকে কর্ম্মে আকার দাও—কর্ম্মে ভাবের প্রতিষ্ঠা কর। চরিত্রবান্ হও। বাঙালী বড় অলস; সুখ চায়। কিন্তু সুখ খুঁজলেও সুখ কি আর মিল্‌বে? অলসতা ও সুখপ্রবণতাই ইচ্চে আমাদের জাতীয় দুর্ব্বলতা। এসব ত্যাগ ক’রে আমাদের এখন একনিষ্ঠ সাধনা কর্‌তে হবে—তবেই এ অস্তিত্ব-সঙ্কট থেকে রক্ষার উপায় হবে। আমাদের এখন আত্মবিশ্বাস চাই। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস চাই, পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের উপযুক্ত হওয়া চাই। আমাদের চরিত্রে গলদ কোথায় খুঁজে বার করতে হবে; সঙ্গে সঙ্গে একটি দোষ পরিহার ক’রে তার স্থলে গুণের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের এখন শ্রমশীল হওয়া চাই, অদম্য উৎসাহ চাই, সাহস ও