উৎকর্ষ সাধনের জন্য অনেকেই পার্শী পড়িতেন। আমার পূর্ব্বপুরুষগণে মধ্যেও কেহ কেহ পার্শীতে বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। ইংরেজ রাজত্বের প্রারম্ভে ও পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সৃষ্টি হইলে সকলে ইংরেজী শিখিতে আরম্ভ করায় ইংরেজ দেখিলেন যে, ইহাদের দ্বারা রাজকার্য্য পরিচালনের বড়ই সুবিধা হয়। তাই তখন ইংরেজী জানিলেই চাকরী। কেহ ওকালতী পাশ করিলেই সরকারী উকীল, বি-এ পাশ করিলেই হাকিম। এইরূপ সরকারী চাকুরী অনায়াসলভ্য হওয়ায় ও তাহার সম্মানের সম্বন্ধে একটি মিথ্যা মোহ থাকায় বাঙালীগণ আরামপ্রিয় হইয়া উঠিলেন। ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি ত্যাগ করিয়া ইংরেজী চর্চ্চায় মনোনিবেশ করিলেন। তখনকার দিনে রামদুলাল দে, মতিলাল শীল প্রভৃতি বিখ্যাত ব্যবসায়িগণ কিরূপে প্রভূত অর্থ উপায় করিয়া ক্রোড়পতি হইয়াছিলেন, তাহা এখন আখ্যান বিশেষ। এই সমস্ত ব্যবসায়িগণের অনেকেই জমিদার হইয়া পড়েন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কৃপায় তাঁহাদের পুত্রপৌত্রাদি সেই-সমস্ত বিষয় সুখে ভোগ-দখল করিলেন। হৌসের মুৎসুদ্দি ও বেনিয়ানের পদ ক্রমে ক্রমে মাড়োয়ারীরা করতলস্থ করিলেন। অচিরাৎ উদ্যমস্পৃহার অভাবে বাঙ্গালীর ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় লুপ্ত হইল।
বাঙ্গালী জাতিকে অধঃপতিত করিবার জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বহুলপরিমাণে দায়ী। এই প্রথায় যেমন কল্যাণ হইয়াছে কিছু, অপকার ও অকল্যাণ হইয়াছে অনেক বেশী। গবর্ণমেণ্ট ও জমিদার এবং প্রজার মাঝামাঝি নানা প্রকার লোকের স্বত্ব আছে। যেমন, তালুকদার, পত্তনিদার, ইত্যাদি। এ-সমস্ত উপস্বত্ব ভোগীরা শুধু আলস্যে বসিয়া বসিয়া দিন গুজ্রান করে। ইহাদের দ্বারা দেশের কল্যাণকর অর্থোৎপাদক (productive of wealth) কোন কার্য্য হয় না। এই ময়মনসিংহ জেলার ৪৫ লক্ষ লোকের মধ্যে যদি ৪৫০০০ হাজার ভদ্রলোক চাকরী