পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্ন-সমস্যা ও তাহার সমাধান
৯৩

 ঢাকা ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে যে মাড়োয়ারী আমল পায় নাই তাহার কারণ এ অঞ্চলের সাহা, তিলি ও তাম্‌লি শ্রেণী ইতিপূর্ব্বে ইংরেজী শিক্ষার মোহে আকৃষ্ট হইয়া জাতীয় ব্যবসায় ত্যাগ করেন নাই। ইঁহাদের মধ্যে প্রকৃত ব্যবসায়বুদ্ধি আছে; “অন্ন সমস্যা” সম্বন্ধে বক্তৃতা করিয়া এক বিপদ্ হইয়াছে যে, দলে দলে ছাত্র আমার কাছে আসিয়া ব্যবসা করা সম্বন্ধে উপদেশ নিতে চান। ইঁহারা ভাবেন যে, আমি ডাক্তারের মতো তাঁহাদের নাড়ী টিপিয়া বলিয়া দিব তাঁহাদের কোন্ দিকে রুচি। তাঁহাদের ব্যবসা ফাঁদিবার যা-কিছু আয়োজন ও সরঞ্জাম সমস্তই “প্রেস্‌ক্রিপ্‌শ্যন্” করিয়া দিতে হইবে—ইঁহারা নিজেরা কিছু ভাধিবেন না বা দেখিবেন ও না। তাঁহাদের অনেক সময় বলি এই সমস্ত সাহা মহাজনদের ওখানে গিয়া দেখিতে, কি করিয়া তাঁহারা একটা ব্যবসায়কে দাঁড় করান। মাড়োয়ারীরা হয় ত বাঙ্গালীকে আমল দেয় না, কিন্তু ইঁহারা তো আমাদের স্বজাতীয়।

 ব্যবসায় করিতে হইলে যে বিপুল মূলধন প্রয়োজন, তাহা এই লোটাকম্বল-সম্বলধারী মাড়োয়ারীদের ক্রমে ক্রমে বাংলা দেশ বিজয়ের ইতিহাস স্মরণ করিলে, অস্বীকার করিতে হয়। সুদূর পল্লীপ্রান্তে কয়েক গণ্ডা টাকামাত্র সম্বল লইয়া অনেক মাড়োয়ারী ব্যবসার পত্তন করিয়া কোটীপতি হইতেছেন। এখন আর শুধু ব্যবসায় নয়, তাঁহারা এবার জমিদারীর আস্বাদ গ্রহণ করিতেছেন। আশঙ্কা হয় আর বিশ বৎসরের মধ্যে বাংলা দেশের অর্দ্ধেক জমিদারী তাঁহাদের আয়ত্তাধীন হইবে, কলিকাতার বিপুল বিভবের শতকরা ৯৫ ভাগ অ-বাঙালীর হইবে। অনেকে বলেন, মূলধনের অভাবই তাঁহাদের ব্যবসাক্ষেত্রে নামিবার প্রধান অন্তরায়। তাঁহারা ভাবেন হাজার কয়েক টাকার তোড়া পাইয়া চৌরঙ্গীতে আফিস,বৈদ্যুতিক পাখা, দরোয়ান্ ইত্যাদি লইয়া বসিতে পারিলেই ব্যবসায়ে কৃতী হইতে পারিবেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যবসায়ের কোন খবরই তাঁহারা রাখেন না।