পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমাজ-সংস্কার সমস্যা
১০১

 ইহার উত্তর এক কথায় পাওয়া যায়। রাজনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে ধঙ্গে সামাজিক সংস্কারের প্রয়োজন—একটি ছাড়িয়া অন্যটি অসম্ভব। কোনও জাতিই নিজের কর্ম্মফল এড়াইতে পারে না। পূর্ব্বে আমরা সমাজ-সংস্কার বিষয়ে যে অবহেলা করিয়াছি এখন তাহারই বিষময় ফল ভোগ করিতেছি। ইহার জন্য রাজনৈতিক উন্নতির পথে আমরা বাধা পাইতেছি। এই সমস্যাটির বিশদ আলোচনা করিবার চেষ্টা করা যাক। আমি প্রধানতঃ বাংলাদেশের কথাই বলিতেছি, তথাপি কথা গুলি সমস্ত ভারতবর্ষের সম্বন্ধেই খাটে।

 মুসলমান ভ্রাতাদের বাদ দিলে বঙ্গে ২১০ লক্ষ হিন্দুর মধ্যে ১২ লক্ষ ব্রাহ্মণ, ১১ লক্ষ কায়স্থ এবং ৮৯ হাজার মাত্র বৈদ্য। আপনারা জানেন কেবল ইঁহারাই উচ্চজাতিভুক্ত বলিয়া বিবেচিত; তৎপরে নবশাক, যাঁহারা ব্রাহ্মণের জলস্পর্শ করিতে পারেন এবং ‘স্পর্শ’ বলিয়া পরিগণিত, যেমন তাঁতি, তিলি, কৈবর্ত্ত, সদ্গোপ, গন্ধবণিক প্রভৃতি; তৎপর প্রায় সমুদয় লোকই সমাজের অতি নিম্নশ্রেণীভুক্ত এবং অল্পাধিক অস্পৃশ্য বলিয়া বিবেচিত। এই অস্পৃশ্যরাই প্রধানতঃ আপনাদের সাহসী ও বলিষ্ঠ কৃষক সম্প্রদায়।

 একবার বঙ্গদেশের সমাজের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী হইতে একাদশ শতাব্দী পর্য্যন্ত বঙ্গদেশে বৌদ্ধধর্ম্মের অল্পবিস্তর প্রাদুর্ভাব ছিল। সম্প্রতি পূর্ব্ববঙ্গের একটী তাম্রমূর্ত্তি হইতে জানা গিয়াছে যে সমতটের (গঙ্গার ব দ্বীপ) রাণী প্রভাবতী নিজে বৌদ্ধ হইলেও শর্ব্বাণী দেবীর অর্থাৎ দুর্গার পূজা করিতেন। আর একখানি তাম্রফলক হইতে ইহাও জানা গিয়াছে যে পালবংশীয় মদনপালের মহিষী মহাভারতের শ্লোকসমূহ আবৃত্তির জন্য কয়েকজন ব্রাহ্মণকে ভূমিদান করিয়াছিলেন। চীন পরিব্রাজক হুয়েনসাংও লিখিয়াছেন যে কান্য-