অধিবাসীরা ক্রমে ক্রমে যে এদেশের লোকের সঙ্গে মিশিয়া যাইতে লাগিল, তাহা তাহাদের মন্দিরগুলি দেখিলেই বুঝিতে পারা যায়। কুচবিহার রাজ্য একসময়ে উত্তর বঙ্গের অনেক অংশ ব্যাপিয়া ছিল; ইহা হইতেও মনে হয় যে বারেন্দ্রভূমিতে কোন কোন শ্রেণীর সহিত মঙ্গোলিয়ানদের রক্তের সংমিশ্রণ ঘটিয়াছে। টড সাহেবের অনুমানে কোন কোন রাজপুত এবং জাঠের পূর্ব্বপুরুষ হূণ এবং শক। আজকাল গবেষণা দ্বারা এই অনুমানটি সত্য বলিয়া বিবেচিত হইয়াছে। এই রক্ত সংমিশ্রণের অকাট্য প্রমাণ প্রতিনিয়ত আমাদের চোখের সামনে রহিয়াছে—মণিপুর, ত্রিপুরা প্রভৃতি করদ রাজ্যে উচ্চবংশীয়দের অঙ্গসৌষ্ঠব বিশেষতঃ মুখের গঠন (Facial Contour) দেখিলে মঙ্গোলীয় রক্তসংমিশ্রণ স্পষ্ট বুঝা যায়—অর্থাৎ রাজপুতানায় যেখানে শক, যবন, হূণ, Scythianদেৱ সহিত মিশ্রণ হইয়া “ক্ষত্রিয়” সৃষ্টি হইয়াছে বাংলার পূর্ব্ব প্রান্তেও সেইরূপ। এই প্রসঙ্গে মহামতি রানাডের “শতবর্ষ পূর্ব্বে দক্ষিণ ভারতবর্ষ”-শীর্ষক প্রবন্ধ হইতে পশ্চাল্লিখিত কিয়দংশ উদ্ধৃত করিতেছি।
“দক্ষিণ ভারতে যে সকল আদিম জাতি বাস করিত তাহাদের সংখ্যা এত অধিক ছিল যে, যে-অল্পসংখ্যক ব্রাহ্মণ কয়েকজন যোদ্ধা ও বণিক সঙ্গে লইয়া সে প্রদেশে বাস করিতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা দেশবাসীর উপর স্থায়ী প্রাধান্য লাভ করিতে পারেন নাই। উত্তর ভারতে আর্য্যজাতির প্রভাষ বিশেষরূপে বিস্তৃতিলাভ করিয়াছিল, কিন্তু খৃষ্টীয়,অব্দের প্রারম্ভকালে শক, হূণ এবং জাঠ বা গথ (যাহারা রোমসাম্রাজ্য ধ্বংস করিয়াছিল) প্রভৃতি নূতন জাতির আক্রমণে তাঁহারা পর্য্যুদস্ত হইয়াছিলেন। উত্তর ভারতে বৈদেশিক আক্রমণে যাহা ঘটিয়াছিল, দক্ষিণ ভারতে আদিম অধিবাসী দ্রাবিড় জাতিগণের উত্থানদ্বারা তাহাই