সমস্ত সুবিধা একচেটিয়া করিয়া লইবেন আর লক্ষ লক্ষ দেশবাসীকে ছোটলোক বলিয়া ঘৃণা করিবেন ইহা কি ধর্ম্মানুমোদিত না ইহাতে দেশের উন্নতি হইবে? নিজেদের মধ্যে অনৈক্য থাকিলে আমাদের পতন অনিবার্য্য। নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাও আমাদের ভাই, তাহাদের বর্ত্তমান হীন অবস্থা হইতে উন্নতির পথে তুলিয়া লইবার জন্য প্রত্যেক দেশহিতৈষীরই আন্তরিক চেষ্টা করা উচিত। দেশের অধিকাংশ লোক দাসের মত থাকিবেন এবং কয়েকজন লোক তাহাদের উপর প্রভুত্ব ফলাইবেন, এরূপ অন্যায় ব্যাপার আর কত দিন চলিবে? দেশের এতগুলি লোক মূঢ় জড়ের ন্যায় পড়িয়া থাকিলে দেশ কি উন্নত হইবে? না শক্তিশালী হইবে? সমুদায় বৃটিশ সাম্রাজ্যের প্রজাগণের সঙ্গে সমান রাজনৈতিক অধিকার লাভের জন্য আমরা নিয়ত আন্দোলন করি কিন্তু আমাদের নিজের দেশবাসিগণকে তাহাদের জন্মগত অধিকার দিতে রাজী নই—সে কথা উঠিলেই যেন আমাদের সর্ব্বনাশ উপস্থিত হয়!
রবীন্দ্রনাথ অনেক দুঃখে বলিয়াছেন—
“যারা নীচে পড়ে আছে সংখ্যায় তারাই বেশি—তাহাদের জীবনযাত্রার আদর্শ সকল বিষয়েই হীন হলেও উপরের লোককে সেটা বাজে না। বরঞ্চ তাদের চাল-চলন যদি উপরের আদর্শ অবলম্বন কর্তে যায় তাহলে সেটাতে বিরক্তি বোধ হয়।
তার পরে এই-সব চির-অপমানে-দীক্ষিত মানুষগুলো যখন মানবসভায় স্বভাবতঃই জোর গলায় সম্মান দাবী কর্তে না পারে, যখন তারা এত সঙ্কুচিত হয়ে থাকে যে বিদেশী উদ্ধতভাবে তাদের অবজ্ঞা কর্ত্তে অন্তরে বাহিরে বাধা বোধ না করে, তখন সেটাকে কি আমাদের নিজেরই কৃতকর্ম্ম বলে গ্রহণ কর্ব না?