পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

 আমরা নিজেরা সমাজে যে অন্যায়কে আটেঘাটে বিধিবিধানে বেঁধে চিরস্থায়ী করে রেখেচি সেই অন্যায় যখন পলিটিক্সের ক্ষেত্রে অন্যের হাত দিয়ে আমাদের উপর ফিরে আসে তখন সেটা সম্বন্ধে সর্ব্বতোভাবে আপত্তি কর্‌বার জোর আমাদের কোথায়?

 জোর করি সেই বিদেশীরই ধর্ম্মবুদ্ধির দোহাই দিয়ে। সে দোহাইয়ে কি লজ্জা বেড়ে ওঠে না! এ কথা বল্‌তে কি মাথা হেঁট হয়ে যায় না, যে, সমাজে আমাদের আদর্শকে আমরা ছোট করে রাখব, আর পলিটিক্সে তোমাদের আদর্শকে তোমরা উঁচু করে রাখ? আমরা দাসত্বের সমস্ত বিধি সমাজের মধ্যে বিচিত্র আকারে প্রবল করে রাখব, আর তোমরা তোমাদের ঔদার্য্যের দ্বারা প্রভুত্বের সমান অধিকার আমাদের হাতে নিজে তুলে দেবে? যেখানে আমাদের এলেকা সেখানে ধর্ম্মের নামে আমরা অতি কঠোর কৃপণতা কর্‌ব, কিন্তু যেখানে তোমাদের এলেকা সেখানে সেই ধর্ম্মের দোহাই দিয়ে অপর্য্যাপ্ত বদান্যতার জন্যে তোমাদের কাছে দর্‌বার কর্‌তে থাক্‌ব এমন কথা বলি কোন্ মুখে? আর যদি আমাদের দর্‌বার মঞ্জুর হয়? যদি, আমরা আমাদের দেশের লোককে প্রত্যহ অপমান কর্‌তে কুণ্ঠিত না হই, অথচ বিদেশের লোক এসে আপন ধর্ম্মবুদ্ধিতে সেই অপমানিতদের সম্মানিত করে তাহলে ভিতরে বাহিরেই কি আমাদের পরাভব সম্পূর্ণ হয় না?

 সেখানেও কি আমরা বল্‌ব, ধর্ম্মবুদ্ধিতে তোমরা আমাদের চেয়ে বড় হয়ে থাক; নিজেদের সম্বন্ধে আমরা যে-রকম ব্যবহার কর্‌বার আশা করিনে আমাদের সম্বন্ধে তোমরা সেই রকম ব্যবহারই কর? অর্থাৎ চিরদিনই নিজের ব্যবস্থায় আমরা নিজেদের খাটো করে রাখি, আার চিরদিনই তোমরা নিজগুণে আমাদের বড় করে তোলো। সমস্ত বরাৎই অন্যের উপরে, আর নিজের উপরে একটুও নয়? এত অশ্রদ্ধা নিজেকে