সংখ্যা লেখাপড়া জানা ব্রাহ্মণের সংখ্যার দ্বিগুণ। আর একটি কথা, বাংলায় বহুকাল হইতে কৈবর্ত্ত, নাপিত, সদ্গোপ এবং তিলি প্রভৃতি জাতি জলাচরণীয় বলিয়া পরিগণিত হওয়ায় অনেকটা সুবিধা হইয়াছে! কিন্তু মান্দ্রাজ ও বোম্বাই প্রদেশে লেখাপড়ায় ব্রাহ্মণগণ অন্যান্য জাতির অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠ, ফলে ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণের মধ্যে বিষম ব্যবধান রহিয়া গিয়াছে। এই ব্যবধানই ঐ দুই প্রদেশে জাতিবিদ্বেষের প্রধান হেতু। অথচ ৪ কোটী ১৫ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে মাত্র ১৫ লক্ষ ব্রাহ্মণ।
সাত আট বৎসর পূর্ব্বে আমি বাঙ্গালীর মস্তিষ্কের অপব্যবহার সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছি তাহা সমগ্র ভারতবর্ষ সম্বন্ধেই খাটে! সেই জন্য কথাগুলি আমি এখানেও উদ্ধৃত করিয়া দিলাম:—“নবদ্বীপের নব্যন্যায় ও স্মৃতির সূক্ষ্ম তর্কে বাঙ্গালীর যে বুদ্ধির প্রাখর্য্যের পরিচয় পাওয়া যায়, তাহাতে আমরা গর্ব্ব অনুভব করি সত্য, কিন্তু আমাদের ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে যে-সময়ে স্মার্ত্ত রঘুনন্দন মনু, যাজ্ঞবল্ক্য ও পরাশরের পুঁথি ঘাঁটিয়া নিয়ম বাহির করিতেছিলেন যে নয় বৎসর বয়সের বালিকা বিধবাকে কিরূপ কঠোর উপবাস করানো আবশ্যক এবং তাহা না করিলে তাহার পিতৃ পুরুষগণ নরকভোগ করিবেন; যে সময়ে রঘুনাথ, গদাধর ও জগদীশ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িকগণ প্রাচীন ন্যায়ের টীকা টিপ্পনী লিখিয়া টোলের ছাত্রগণের ভীতি উৎপাদন করিতেছিলেন, যেসময়ে আমাদের জ্যোতিষীগণ, গণনা করিতেছিলেন, নৈঋত কোণে কোন্ কোন্ মুহূর্ত্তে কাক ডাকিলে তাহার ফলাফল কি; যে-সময়ে আমাদের দেশের পণ্ডিতগণ তাল ঢিপ্ করিয়া পড়ে কি পড়িয়া ঢিপ্ করে এই গুরুতর বিষয় সম্বন্ধে প্রচণ্ড তর্কের দ্বারা সভ্যসমূহের শান্তি ভঙ্গ করিতেছিলেন; যে-সময়ে নবদ্বীপের বুদ্ধিমান্ ব্যক্তিগণ অমূল্য সময়ের