এইরূপ ব্যবহার করিতেছিলেন, সেই সময়ে ইউরোপে গ্যালিলিও, কেপ্লার, নিউটন ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিকগণ প্রকৃতির রহস্য উদ্ভেদ করিতেছিলেন এবং এক নবযুগের প্রবর্ত্তন করিয়া মানববুদ্ধির মহিমা প্রচার করিতেছিলেন।”
স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলিয়াছেন—“যে ধর্ম্মে গরীবের দুঃখ বোঝে না, মানুষকে উন্নত করে না, তাহা ধর্ম্মনামের যোগ্য নহে। আমাদের ধর্ম্ম এক্ষণে কেবল ‘ছুৎমার্গে’ পরিণত হইয়াছে—কাহাকে ছুঁইতে পারা যায়, কাহাকে ছুঁইতে পারা যায় নাং তাহারই বিচারে পরিণত হইয়াছে। হা ঈশ্বর! যে দেশের সর্ব্বপ্রধান পণ্ডিতগণ ডান হাতে খাইব না বাঁ হাতে খাইব এইরূপ কঠিন সমস্যার মীমাংসায় গত দুহাজার বৎসর ব্যস্ত আছেন; সে দেশের অধঃপতন হইবে না ত হইবে কাহার?
বাংলার স্বামী বিবেকানন্দের মত পাঞ্জাবের স্বামী রামতীর্থও ভারতবর্ষে এবং আমেরিকায় একজন অসাধারণ ক্ষমতাশালী ধর্ম্মপ্রচারক বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছেন। তিনিও বিবেকানন্দের মত ওজস্বিনী ভাষায় বর্ত্তমান জাতিভেদ প্রথার অসারতা ও অনিষ্টকারিতা ঘোষণা করিয়া গিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন:—“হিন্দুসমাজের অন্তর্গত নীচ জাতীয় লোকেরাই কঠোর পরিশ্রম দ্বারা সমাজের সেবা করিয়া থাকে, কিন্তু তাহার পরিবর্ত্তে উচ্চজাতীয় লোকেরা তাহাদিগকে নিজের ভুক্তাবশিষ্ট মাত্র দিয়া বাঁচাইয়া রাখেন। দরিদ্র নিম্নশ্রেণীস্থ লোকেরাই সমাজের চরণস্বরূপ বা ভিত্তিস্বরূপ। যে অহঙ্কারী সমাজ এই নিম্নশ্রেণীস্থ লোকেদের উপর অত্যাচার করে এবং তাহাদিগকে শিক্ষা ও সুবিধা লইতে বঞ্চিত করিয়া রাখে সে-সমাজ নিজের পা নিজেই কাটিয়া ফেলে, সে-সমাজ ভূমিশায়ী হইবেই হইবে।”